৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

অনলাইন ডেস্ক: গাড়ি দুর্ঘটনায় চালকের জামিন না পাওয়ার আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। দাবি না মানলে আগামী ১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে সারা দেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। চট্টগ্রাম নগরের স্টেশন রোডের হোটেল সৈকতে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই ঘোষণা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কফিল উদ্দিন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে এ সমাবেশের আয়োজন করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণ ও পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক ফেডারেশনের সভাপতি মোরশেদুল আলম কাদেরীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন হুমায়ুন কবির খান, একরামুল করিম ও হুমায়ুন কবির সোহেল।
কফিল উদ্দিন আহমেদ বলেন, যোগাযোগ উপদেষ্টার কাছে আমরা এই আট দফা দাবি জানিয়েছি। সারা দেশেই দাবির পক্ষে প্রচার চলছে। উপদেষ্টা দুটি দাবি মানার আশ্বাস দিয়েছেন। তবে আমরা বলেছি, সব দাবি মানতে হবে। আগামী ১১ আগস্ট (মঙ্গলবার) বিকেলের মধ্যে দাবি মেনে না নিলে ১২ আগস্ট ভোর ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত সারা দেশে পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে।
তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারায় বলা হয়েছে, একজন চালকের গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়লে তাঁর জামিন মিলবে না, পাঁচ বছর কারাদণ্ড এবং পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আমরা বলছি, দুর্ঘটনার কারণে মামলা হতে পারে, কোর্ট সাজা দিতে পারে। কিন্তু জামিন পাওয়া যাবে কি না, তা নির্ধারণ করা আদালতের বিষয়। এটি নাগরিক অধিকার। আইনে জামিন নিষিদ্ধ করে রাখা উচিত নয়। এই ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।’
বাণিজ্যিক যানবাহনের আয়ুষ্কাল নিয়ে তিনি বলেন, ‘২০ বছর পূর্ণ হওয়া গাড়িগুলো ইতিমধ্যে ধরে ধরে ডাম্পিংয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে ৮০ শতাংশ গাড়ি সড়কে চলাচলের বাইরে চলে যাবে। আমরা বলছি, যেসব গাড়ির ফিটনেস আছে, সেগুলো চলতে দিতে হবে। যেগুলোর ফিটনেস নেই, সেগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত করা যেতে পারে। একজন ৮৩ বছর বয়সী ব্যক্তি যদি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হয়ে দেশ পরিচালনা করতে পারেন, তাহলে ২০ বছরের গাড়িকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যায় না।’সমাবেশ থেকে জানানো হয়, আট দফা দাবি না মানা হলে আন্দোলন আরও বিস্তৃত হবে এবং ধর্মঘট থেকে পেছানোর সুযোগ থাকবে না।
আট দফা দাবিগুলো হলো—সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮–এর ৯৮ ও ১০৫ নম্বর ধারা সংশোধন করা, পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল (ইকোনমিক লাইফ) ২০ ও ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা, সেটা না হওয়া পর্যন্ত পুরোনো গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান স্থগিত রাখা, বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের ওপর আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে আগের মতো বহাল করা, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা থেকে সরানোর জন্য সহায়ক হিসেবে বাণিজ্যিক রিকন্ডিশন যানবাহন আমদানির সময়সীমা ৫ থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান কার্যকর করা।
অন্যান্য দাবিগুলো হল—মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন করা, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও অনুমোদনহীন হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি করা ও ড্রাইভিং লাইসেন্স-নবায়ন দ্রুত দেওয়া এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা বাস্তবায়ন করা।সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন পরিবহণ মলিক নেতা মহিউদ্দিন, নূর ইসলাম, ফারুক খান, মো. শাহজাহান, রেজাউল, রবিউল মওলা, মূসা ও আজিজুল হক সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পরিবহণ মালিক শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

আরও পড়ুন