৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সেই ঝুঁকিপূর্ণ সোমালিয়ার পথে ‘এমভি আবদুল্লাহ’

নিজস্ব প্রতিবেদক: কয়লাবাহী এম ভি আবদুল্লাহ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে ভারত মহাসাগর দিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। দুপুরের দিকে হঠাৎ ছোট ছোট বোট নিয়ে জাহাজটি ছিনতাই করে জলদস্যুরা। ৯ দিনের মাথায় দস্যুরা প্রথম মালিকপক্ষের কাছে মুক্তিপণের দাবি জানায়। শুরু হয় দর-কষাকষি। ডলারভর্তি তিন ব্যাগ টাকা দেওয়ার পর ৩৭ দিন জিম্মিদশা থেকে মুক্তি মেলে জাহাজের ২৩ ক্রু’র। সে সময় ওই জাহাজের নিরাপত্তাব্যবস্থায় ‘ঘাটতি ছিল’ বলে মত দিয়েছিল সংশ্লিষ্টরা। মাত্র বছরখানেক আগের সেই ‘দুঃস্বপ্নের’ স্মৃতি এখনো তাজা। সেই স্মৃতি নিয়েই দস্যুতার কবলে পড়া একই পথ ধরে স্পেন থেকে করাচী যাচ্ছে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন সেই ‘এমভি আবদুল্লাহ’। তবে এবার জাহাজের নিরাপত্তায় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট ব্যবস্থা নিয়েছে। নিরাপত্তা জোরদারে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী, সক্রিয় করা হয়েছে সামুদ্রিক সতর্কতা সিস্টেম। আর জাহাজের দায়িত্বে রয়েছেন অপহৃত ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ।
গত ৩১ মে নিজের ফেসবুক আইডির এক পোস্টে এমভি আবদুল্লাহ’র ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশীদ সবার কাছে দোয়া চেয়ে লিখেছেন, ‘‘সোমালিয়ান দস্যুদের দ্বারা আক্রান্তের সেই এলাকা দিয়েই এখন আমাদের জাহাজ ‘আবদুল্লাহ’ যাচ্ছে আবারও। আমাদের জন্য দোয়া করবেন।’’
দস্যুপ্রবণ সেই এলাকা যখন অতিক্রম করছে এমভি আবদুল্লাহ, তখন জাহাজের ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশীদের কাছে জানতে চাওয়া হয় নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের কোম্পানি এবং জাহাজের পক্ষ থেকে জলদস্যু আক্রমণ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমাদের কোম্পানি আমাদের বাড়তি নিরাপত্তার জন্য আর্মগার্ড (সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী) নিয়োগ দিয়েছে।’
কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাহাজের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আর্ম গার্ড থেকে শুরু করে বাকি যা যা থাকে সবকিছুরই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সবকিছু মনিটরিংয়েও রাখা হচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ‘গোল্ডেন হক’ নামের জাহাজটি কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। গত বছর এটি সংগ্রহ করে সাধারণ পণ্য পরিবহন করতে থাকে কেএসআরএম গ্রুপ। ২০২৪ সালের ১২ মার্চ কয়লাবাহী ‘এম ভি আবদুল্লাহ’ আফ্রিকার মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল। ভারত মহাসাগর দিয়ে যাওয়ার সময় ছোট ছোট বোট নিয়ে জাহাজটি নিজেদের কব্জায় নেয় সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তির পর ১৩ মে এমভি আব্দুল্লাহ বাংলাদেশে আসে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টার পরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ৫৫ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই জাহাজটি নোঙর করে। এদিন বিকেল ৪টায় বিকল্প দল বা রিপ্লেসমেন্ট টিমের নতুন ২৩ নাবিককে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুতুবদিয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এমভি জাহান মনি-৩ নামে আরেকটি লাইটারেজ জাহাজ। ২৩ নাবিকসহ পরদিন বিকালে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় এমভি আবদুল্লাহ।
এর আগে ২০১০ সালে ছিনতাই হওয়া একই কোম্পানির জাহাজ এমভি জাহান মণি ১০০ দিনের মাথায় ছেড়ে দেয় দস্যুরা। সে সময় সোমালিয়া রিপোর্টের (বর্তমানে বিলুপ্ত) প্রতিবেদনে বলা হয়, জাহাজটি মুক্ত করতে চার মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করে মালিকপক্ষ। এমভি জাহান মণি জাহাজের মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের বিষয়টি এখনো স্বীকার করেনি মালিকপক্ষ।

আরও পড়ুন