অনলাইন ডেস্ক: সাংবাদিক মুন্নী সাহা, তার স্বামী কবির হোসেন তাপস এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার কথা জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।এ বিষয়ে আদালতের আদেশের ১৮ দিন পর শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিআইডি বলেছে, এসব অ্যাকাউন্টে মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা স্থিতি রয়েছে।ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের একজন বিচারক গত ৫ মে এসব অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করার আদেশ দেয়।বিষয়টি প্রকাশ করতে বিলম্বের কারণ জানতে চাইলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান বলেন, “আদালতের আদেশের পর পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে কিছুটা সময় লেগেছে।”মুন্নী সাহা ‘এক টাকার খবর’ নামে একটি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক। আর কবির হোসেন তাপস এমএস প্রমোশনাল নামে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার স্বত্ত্বাধিকারী।
সিআইডি বিজ্ঞপ্তিতে বলছে, “মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করে বিধিবহির্ভূতভাবে প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন। অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ তারা নিজ এবং স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে লেনদেন করে আসছিলেন মর্মে সিআইডির কাছে অভিযোগ এলে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী সন্দেহভাজন ব্যক্তি ও তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং অনুসন্ধান শুরু করে।
“প্রাথমিক অনুসন্ধানকালে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মুন্নী সাহা ও তার স্বামী কবির হোসেন এবং তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবের তথ্য পর্যালোচনা দেখতে পান যে, বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৪৬টি ব্যাংক হিসাবে খোলা হয়েছে। যার মধ্যে বর্তমানে ৩৫টি ব্যাংক হিসাব চালু রয়েছে।”
হিসাব খোলার তারিখ থেকে এসব অ্যাকাউন্টে মোট ১৮৬ কোটি ৫৬ লাখ ৯১ হাজার আট টাকার লেনদেন হওয়ার তথ্য তুলে ধরে সিআইডি বলেছে, তাদের বিচারে এসব লেনদেন সন্দেহজনক। বর্তমানে অ্যাকাউন্টগুলোতে ১৮ কোটি ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ৭৩৯ টাকা স্থিতি রয়েছে।
“প্রাথমিক অনুসন্ধানে উক্ত ব্যাংক হিসাব সমূহের লেনদেন সন্দেহজনক মনে হওয়ায় তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে লেনদেন অবরুদ্ধ করার আবেদন করেন। আবদনের প্রেক্ষিতে সিনিয়র স্পেশাল জজ ৩৫টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করার আদেশ প্রদান করেন।”
এর আগে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) অনুসন্ধানের বরাত দিয়ে কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনেও মুন্নী সাহা ও কবির হোসেন তাপসের ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেনের খবর প্রকাশিত হয়। স্থগিত থাকা এসব অ্যাকাউন্টে ১৪ কোটি টাকা থাকার কথা বলা হয় সেখানে।দুর্নীতি দমন কমিশনও মুন্নী সাহা এবং তার স্বামীর বিরুদ্ধে ‘জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের’ অভিযোগ খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত জানায়।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর কারওয়ান বাজারে নিজের অফিস থেকে বেরিয়ে এক দল লোকের ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন মুন্নী সাহা। পরে তাকে আটক করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। তার বিরুদ্ধে চারটি মামলা থাকার তথ্য দিয়ে তাকে নেওয়া হয় মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে।
চার ঘণ্টা পর পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয় মুন্নী সাহাকে। পুলিশ ‘স্বপ্রণোদিত’ হয়ে তাকে গ্রেপ্তার না করায় এবং তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার প্রেক্ষিতে ‘আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে’ ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা সে সময় জানিয়েছিলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে নাঈম হাওলাদার নামে এক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তার বাবা মো. কামরুল ইসলাম সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের একাধিক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে মামলা করেন। ওই মামলায় এটিএন নিউজের সাবেক বার্তা প্রধান মুন্নী সাহাসহ সাত সাংবাদিককেও আসামি করা হয়।
গত বছরের ৬ অক্টোবর মুন্নী সাহার সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য জানতে চেয়ে সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠায় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। চিঠিতে তার আমানত, ঋণ, ক্রেডিট কার্ড, ফরেন ট্রেড, এক্সচেঞ্জ, লকার ও অফশোর ব্যাংকিংয়ের তথ্য চাওয়া হয়।
