নিজস্ব প্রতিবেদক: সংস্কার, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, করিডর, স্টার লিঙ্ক, প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ইস্যু সহ নানা বিষয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য দিয়েছেন দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির সিনিয়র নেতারা। বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল আয়োজিত তারুণ্যের সমাবেশে অংশ নিয়ে সরকারকে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। বিশেষ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সরকার টালবাহানা করছে বলে মন্তব্য করেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় সাম্প্রতিক সময় সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের কঠোর সমালোচনা করেন বিএনপির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য।
সমাবেশে লন্ডন থেকে ভাচুয়ালি অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, যেকোনো দল তাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হলে দরকার একটি জবাবদিহিমূলক সরকার, দরকার একটি নির্বাচিত সরকার। তবে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে মনে হয় এরই মধ্যে টালবাহানা শুরু হয়েছে বা চলছে। কথিত অল্প সংস্কার আর বেশি সংস্কারের অভিনব আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।
সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের জন মানুষের আকাঙ্ক্ষিত সরকার, ছিল আস্থার সরকার। এ সরকারের কাছ থেকে আমরা কিছু পাইনি। এ সরকারের মধ্যে বেশি ভাগ এ দেশের নাগরিক নয়। তারা বলেন, সংস্কার করে নির্বাচন দেবে, কিন্তু তারা ৯ মাসেও সংস্কার করতে পারেননি, ৯ বছরেও পারবে না। কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে, কী সিদ্ধান্ত নেবে তা তারা জানে।
মির্জা আব্বাস বলেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, করিডর, দ্বিতীয় ওয়ার্ল্ড, স্টার লিঙ্ক দিয়ে কী করছেন? আপনারা মনে করছেন বুঝি না? আমরা বুঝি। দেশের মানুষকে বোকা ভাববেন না। তিনি বলেন, দেশ প্রেমিক মানুষের ভেতরে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। আমরা কথা বললেই, কাজ শেষ করার কথা বলেন। আমরা জানি, কোন কাজ শেষ করতে পারবেন না। এ সরকারের মাথা থেকে আগা পর্যন্ত পচন ধরেছে। এসময় কিছু লোক ইচ্ছাকৃত ভাবে চাঁদাবাজি করছে, এদেরকে প্রতিহত করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছিল। দেশের তরুণ ছাত্রসমাজ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছে। জুলাই আগস্টে আমাদের প্রথম বিজয় হয়েছে। আমাদের আন্দোলন কিন্তু থেমে যায়নি।
আমরা বিজয়ের দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে রূপ দিতে হবে। অবিলম্বে দ্রæত নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে। জনগণ চায় গণতন্ত্র। আমরা সরকারকে সেজন্য সহযোগিতা করেছি। সহযোগিতা থাকবে। কিন্তু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। না হলে বিক্ষুব্ধ তরুণ সমাজের আন্দোলনে কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার পালাতে পারবে না।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, গণতন্ত্রের পথ হলো নির্বাচন। নির্বাচন পেছানোর হেলাফেলা চলবে না। নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে টালবাহানা চলবে না। সংস্কারের যদি ঐকমত্য না হয়ে থাকে, কান খুলে শুনে রাখুন, সেই সংস্কার বাংলাদেশের জনগণ মানবে না।
আপনারা সংস্কার করার কে? সংস্কার করবে দেশের জনগণ। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সংস্কার হবে। আমির খসরু বলেন, সংস্কারের প্রথম প্রস্তাব দিয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন ২০৩০। এরপর আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ২৭ দফা দিয়েছেন। পরবর্তীতে যুগপৎ আন্দোলনের দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে ৩১ দফা দিয়েছেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা নির্বাচনের রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। আমরা তার পদত্যাগ চাইনি। কিন্তু তিনি পদত্যাগের নাটক করেছেন। আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চেয়েছি। নিরপেক্ষ সরকার, গণতন্ত্র ও নির্বাচনের দাবিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের সবার লক্ষ্য হোক সবার আগে বাংলাদেশ। তারেক রহমানের নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশ হবে নতুন বাংলাদেশ। তিনি বলেন, আমরা এমন রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই যেখানে তারুণ্যের অংশগ্রহণ থাকবে। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি।
অত্যন্ত সুকৌশলে ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা চলছে। আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন-নিপীড়ন ও তাদের লুটপাটের কথা ভুলতে বসেছি। আমরা গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছি। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
তিনি বলেন, ব্রিটিশ শাসন আমলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ২০০ বছরে যা লুটপাট করেছে তারচেয়ে বেশি সম্পদ লুট করেছে আওয়ামী লীগ। তারা ৩০ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। ৪ লাখ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। বিদ্যুৎ ও ব্যাংক খাতে লুটপাট চালিয়েছে। ব্যাংক থেকে যত টাকা লুট করেছে তা দিয়ে ৩৬ টা পদ্মাসেতু বানানো যেত। আমাদের একমাত্র শত্রু আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ কখনও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেনি। তারা গণতন্ত্র হত্যাকারী।
জাতীয়তাবাদী যুবদলের সভাপতি মোনায়েম মুন্নার সভাপতিত্বে ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান এবং ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছিরের সঞ্চালনায় তারুণ্যের সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ প্রমুখ।
