আবছার উদ্দিন অলি : সন্জিত আচার্য্য আমাদের সবার প্রিয় শিল্পী। গুণী এই শিল্পীর জন্ম চট্টগ্রামে। আর চট্টগ্রামকে ভালোবেসে সারাটা জীবন চট্টগ্রামে কাটালেন। নানা সুযোগ থাকা সত্বেও কখনো চট্টগ্রামের মায়া ছাড়তে পারেননি। মনে প্রানে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংস্কৃতিকে ভালোবেসে তিনি সর্বদা আঞ্চলিক গান ও নাটক রচনা করে গেছেন। একাধারে তিনি গীতিকার, সুরকার, সংগতি পরিচালক, শিল্পী, নাট্যকার। চট্টগ্রাম শিল্পী কল্যাণ সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের বিভিন্ন ক্যাম্পে গণসংগীত পরিবেশন করে মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসাহিত, অনুপ্রাণিত করেছেন। স্কুল জীবন থেকে তার গান গাওয়া শুরু। তার পিতা ছিলেন পদাবলী কীর্ত্তনীয়া। পরিবারে ছিল চমৎকার সাংস্কৃতিক পরিবেশ। পিতৃ সূত্রেই সংগীতে পদার্পণ, পিতার কাছেই সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি। সে সময় শেফালী ঘোষ, শ্যাম সুন্দর বৈষ্ণব, মলয় ঘোষ দস্তিদার, মোঃ নাসির বেতারে তাদের গাওয়া জনপ্রিয় আঞ্চলিক গান শুনে তার মনে প্রভাব বিস্তার করে। এরপর শুরু হয় তার গান লেখা ও সুর করা। চট্টগ্রামের শ্যাম শেফালীর পরে সনজিত আচার্য্য ও কল্যাণী ঘোষ জুটি দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছেন। তাদের গান শোনার জন্য এখনও অনেক অনুষ্ঠানে দর্শকদের অনুরোধ আসে। এ পর্যন্ত সনজিত আচার্য্য রচিত, সুরারোপিত গানের সংখ্যা পাঁচ শতাধিক। মঞ্চ, বেতার, টেলিভিশন, গ্রামোফোন রেকর্ড, অডিও সিডি-ভিসিডি, ছায়াছবি, টেলিফিল্ম সব মিডিয়াতে তার লেখা, সুর করা এবং গাওয়া গান রয়েছে। বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন- ১৯৭৮ সালে। বর্তমানে “এ” বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী ও সঙ্গীত পরিচালক। টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত হন, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র হওয়ার পর, এখন “এ” গ্রেডের সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও শিল্পী। ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর তিনি আমাদের ছেড়ে পরলোক গমন করেন। ৯ ডিসেম্বর তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধা। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানের একজন রত্ন হারালো চট্টগ্রামবাসী। যিনি কিনা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গানকে ভালোবেসে অনুভবে অনুক্ষনে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে ভালোবেসেছেন আপন মনে। এমন হাসিমুখে থাকা শিল্পী এই শহরে খুঁজে পাওয়া যাবে না। গানের প্রতি একান্তই নিজস্ব ভাবনা থেকে তিনি তৈরি করেছেন কালজয়ী অনেক গান। যা আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছে। লেখক: সাংবাদিক ও গীতিকার




