২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ বৃহস্পতিবার

অনলাইন ডেস্ক: জুলাই অভ্যুত্থানের সময়কার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি হয়েছে।সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ বিষয়ে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন ঠিক করেছেন।
আদালত অভিযোগ গঠন করলে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম কোনো মানবতাবিরোধী মামলার বিচার প্রক্রিয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আর তা শুরু হবে সেই আদালতে, যে আদালত তার সরকার গঠন করেছিল একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য।
শেখ হাসিনার পাশাপাশি তার সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এবং অভ্যুত্থানের সময় আইজিপির দায়িত্বে থাকা চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে আসামি করা হয়েছে এ মামলায়। গত ১ জুন তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
এর আগে ১২ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ এনে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেখানে শেখ হাসিনাকে জুলাই–অগাস্টের নৃশংসতার ‘মাস্টারমাইন্ড, হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সেদিন সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবেদনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শুরু করার ৬ মাস ২৮ দিনের মধ্যে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে দেশব্যাপী যে মানবতাবিরোধী অপরাধ, হত্যাকাণ্ড, গুলি করে আহত করা, লাশ পুড়িয়ে দেওয়ার মত যে সমস্ত অমানবিক কর্মকাণ্ড হয়েছিল, এই সমস্ত কর্মকাণ্ডগুলো তদন্ত করে প্রধান মাস্টারমাইন্ড এবং হুকুমদাতা হিসেবে সুপিরিয়র কমান্ডার হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করেছেন।”
তদন্ত প্রতিবেদনে মূলত পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে জানিয়ে অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম অভিযোগ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে উসকানি ও প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
“১৪ জুলাই প্রেস কনফারেন্সে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা, রাজাকারের নাতিপুতি বলেছিলেন। বলার মধ্য দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ছাত্রলীগ ও সহযোগী বাহিনী অক্সিলারি ফোর্স হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে, হত্যা করে, আহত করে এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ করে।”দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়েছে, জুলাইয়ের সেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটানো হয়েছিল শেখ হাসিনার ‘সরাসরি নির্দেশে’।“শেখ হাসিনার এরকম অনেক টেলিফোনিক কনভারসেশন জব্দ করেছে তদন্ত সংস্থা। তিনি রাষ্ট্রীয় সকল বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন হেলিকপ্টার, ড্রোন, এপিসিসহ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে নিরস্ত্র, নিরীহ আন্দোলনকারী সিভিলিয়ান পপুলেশন, যারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে রত ছিল, তাদের সম্পূর্ণ নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল কারার নির্দেশ দিয়েছিলেন।”এক্ষেত্রে হত্যার নির্দেশ, গুলি করে আহত করার নির্দেশ, সহযোগিতা করার অভিযোগ আনা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে।বাকি তিনটি অভিযোগ নির্দিষ্ট ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বলে তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন সেদিন।
তাজুল বলেছিলেন, জুলাইয়ের আন্দোলন দমাতে প্রায় দেড় হাজার লোককে হত্যা করা হয়েছে, ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে গুলি করে আহত করা হয়েছে, নারীদের ওপর সহিংসতা হয়েছে, ‘টার্গেট’ করে শিশুদের হত্যা করা হয়েছে, হত্যাকাণ্ডের পর লাশ ও জীবিত মানুষকে একত্রিত করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, আহতদের হাসপাতালে নিতে, চিকিৎসা দিতে, এমনকি পোস্টমর্টেমেও বাধা দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয় তদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে।“আন্দোলনকারীদের ওপর দায় চাপানোর জন্য বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় নিজেদের লোক দিয়ে আগুন লাগিয়ে তার দায় চাপানোর জন্য নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছিল, তার টেলিফোনিক নির্দেশ তদন্ত সংস্থার হস্তগত হয়েছে।”
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম সেদিন বলেন, মোটাদাগে এ মামলাকে তারা গণহত্যা বলছেন না, আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে মিল রেখে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলছেন।একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের বিচারের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
অভিযোগ দাখিলের পর প্রসিকিউশনের আবেদনে গত ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। দেশ ছাড়ার পর থেকেই ভারতে অবস্থান করছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।জুলাই-অগাস্টের দমন-পীড়নে ভূমিকার জন্য দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের জন্যও ইতোমধ্যে আইন সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচনের আগেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার শেষ করার দাবি জানিয়ে আসছে।
আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সম্প্রতি এক ফেইসবুক পোস্টে বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনামলেই এ বিচার শেষ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

আরও পড়ুন