বিনোদন প্রতিবেদক : একসময় রুপালি পর্দা কাঁপানো চিত্রনায়িকা শাহিনা শিকদার বনশ্রী মারা গেছেন। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টায় মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫২ বছর।বনশ্রীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য সনি রহমান।
তিনি জানান, বেশ অনেক বছর ধরেই বার্ধক্যজনিত রোগে রোগে ভুগছিলেন বনশ্রী। অবশেষে চলে গেলেন।শিবচরের মাদবরের চর ইউনিয়নের মেয়ে বনশ্রী। ১৯৭৪ সালের ২৩ আগস্ট এই এলাকার শিকদারকান্দি গ্রামে জন্ম তার।
বাবা মজিবুর রহমান মজনু শিকদার ও মা সবুরজান রিনার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে বনশ্রী বড়। সাত বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে রাজধানী ঢাকায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন তিনি।১৯৯৪ সালে ‘সোহরাব রুস্তম’ সিনেমা দিয়ে রুপালি পর্দায় অভিষেক ঘটে বনশ্রীর। নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিপরীতে ছবিটি ব্যবসা সফল হয়।পরিচিতি পান বনশ্রী। এরপর আরো গোটাদশেক সিনেমায় অভিনয় করেন। নায়ক মান্না, আমিন খান, রুবেলের বিপরীতেও নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন বনশ্রী। রুপালি পর্দার মতো বনশ্রীর জীবনও হয়ে ওঠে আলো ঝলমল। একের পর এক সাফল্য, তারকাখ্যাতি।তবে খুব বেশিদিন সেই সুখ সয়নি বনশ্রীর কপালে। ভাগ্যদোষে ছিটকে পড়েন তিনি সিনেমা থেকে। এরপর থেকেই বিষাদময় জীবন শুরু হয় অভিনেত্রীর। একটা সময় পথে পথে ঘুরে দিন কেটেছে তার। থেকেছেন বস্তিতেও। শাহবাগে একসময় ফুলের ব্যবসায়ও করেছেন। বাসে বাসে হকারিও করতে হয়েছে তিনবেলা খাবার জুটাতে। বনশ্রীর দুই সন্তান ছিল। তার মধ্যে মেয়েটি ছিনতাই হয়ে গেছে। মেয়ে যখন সেভেনে পড়ে তখন এক অডিও কম্পানির মালিক তার মেয়েকে কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছিলেন বনশ্রী। থানা-পুলিশ করেও মেয়েকে আর ফেরত পাননি।
একসময় শহুরে জীবনের নানা চড়াই-উতরাই শেষে তিনি ফিরে যান নিজ এলাকা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায়। নানা জায়গায় ঘুরে অবশেষে এ চিত্রনায়িকার ঠাঁই হয় আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে। ছেলে মেহেদী হাসান রোমিওকে নিয়ে থেকেছেন সেখানেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অনুদান হিসেবে পাওয়া ২০ লাখ টাকার সুদ হিসেবে মাসে মাসে যা পান, তা দিয়েই চলত তার সংসার। অবশেষে জীবন থেকে মুক্ত হয়ে পরপারে পাড়ি জমালেন একসময়ের এই জনপ্রিয় নায়িকা।
