১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

মাইক্রোওয়েভে যে কোনো তরল গরম করার ক্ষেত্রে সাবধান

নিউজ ডেস্ক: মাইক্রোওয়েভে পানি, দুধ চা বা কফি গরম করা অনেকের কাছেই নিয়মিত বিষয়।এক কাপ চা বানাতে বা রাত জেগে কাজ করার সময় তাৎক্ষণিকভাবে নুডলস রান্না করতে অনেকেই এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।তবে এই সহজ পথ বেছে নেওয়াটা বড় বিপদের কারণ হতে পারে।শুধুমাত্র মাইক্রোওয়েভে পানি গরম করাই নয়, যদি সেই পাত্রে অন্য কিছু না থাকে, তবে এর ফলে হতে পারে ত্বকের মারাত্মক দগ্ধতা, এমনকি মুখ ও গলার ভেতরেও গুরুতর ক্ষতি হতে পারে।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক খাদ্যবিজ্ঞানী ও ‘মেনডোসিনো ফুড কনসালটিং’–এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রায়ান কুয়ক লো জানান, “মাইক্রোওয়েভ যন্ত্রটি পানির অণুগুলোর সঙ্গে বিক্রিয়া করে এবং পানির কেন্দ্রীয় অংশে অণুগুলোকে দ্রুত কম্পন করায়, ফলে নির্দিষ্ট অংশে তাপমাত্রা হঠাৎ করে অত্যধিক বেড়ে যায় এবং দ্রুত বাষ্পে পরিণত হয়ে বিস্ফোরণের সৃষ্টি করতে পারে।”
চুলায় পানি গরম করার সময় তাপ পুরো পানিতে সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মাইক্রোওয়েভে গরম করার ক্ষেত্রে পানি অসমভাবে গরম হয়। এতে দেখা যায়, পানির কিছু অংশ ফুটে ওঠে না এবং ওপরের দিকে কোনো বুদবুদ দেখা না গেলেও অভ্যন্তরীণভাবে পানি মারাত্মকভাবে গরম হয়ে যেতে পারে।
যখন সেই পানিতে চামচ দেওয়া বা কাপ নাড়ান হয়, তখন হঠাৎ করে উত্তপ্ত বাষ্প বের হয়ে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এই ধরনের দুর্ঘটনার ফলে শরীরে আগুনে পোড়ার মতো দগ্ধতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অর্থোডোন্টিস্ট (মুখ ও দাঁতের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ) ডা. মোহাম্মাদ খোরশিদ একই প্রতিবেদনে বলেন, “মুখগহ্বরের দগ্ধতার প্রধান কারণ মাইক্রোওয়েভে গরম করা পানীয় পান করা। মাইক্রোওয়েভে গরম পানি বা তরলে সাধারণত কিছু ঝুঁকি দেখা যায়।”
কোনো পূর্বাভাস নেই
পানি বাইরে থেকে দেখতে স্বাভাবিক মনে হলেও, নাড়া দিলে বা চুমুক দিলে হঠাৎ ছলকে উঠতে বা বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
দ্রুত টিস্যু ক্ষতি
মুখ ও গলার অভ্যন্তরে সূক্ষ্ম ও স্নায়ুসমৃদ্ধ ‘মিউকোসাল টিস্যু’ থাকে। তাই গরম তরলের সংস্পর্শে এলেই সেখানে গুরুতর জ্বালা বা ব্যথা হতে পারে।
ফুসফুসের ক্ষতি
গরম তরল মুখে সহ্য না হলে হঠাৎ গিলে ফেললে শ্বাসনালীতে ঢুকে ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। এতে শ্বাসনালির পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা জীবনঘাতী হতে পারে।
ডা. খোরশিদ আরও বলেন, “সাধারণত এই ধরনের দগ্ধতা মুখের তালু, জিহ্বা, ঠোঁট ও গলার প্রাচীরে (ফ্যারিঞ্জিয়াল মিউকোসা) হয়ে থাকে।প্রথম পর্যায়ের দগ্ধতা হলে শুধু লালচে-ভাব ও হালকা ব্যথা হতে পারে। তবে দ্বিতীয় পর্যায়ে ফোসকা পড়া, চামড়া ওঠা এবং তীব্র ব্যথা দেখা দিতে পারে।তৃতীয় পর্যায়ের দগ্ধতা তুলনামূলক বিরল হলেও দীর্ঘসময় উত্তপ্ত তরলের সংস্পর্শে এলে সেটাও ঘটতে পারে, যা গভীরভাবে কোষের ক্ষতি করতে পারে।এ ক্ষেত্রে কিছু লক্ষণ অনুভব করলে চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া প্রয়োজন।
যেমন- মুখে ফোসকা পড়া বা চামড়া ওঠা। ব্যথা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হওয়া। গিলতে বা শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া। গলা ভারী লাগা বা স্বর পরিবর্তন। মুখগহ্বরে সাদা দাগ বা ঘা, যা এক সপ্তাহেও সারছে না। জ্বর বা দুর্বলতা অনুভব করা।
প্রতিরোধই সমাধান
ডা. খোরশিদ বলেন, “একজন অর্থোডোন্টিস্ট হিসেবে বরাবরই রোগীদের মুখগহ্বরের সংবেদনশীলতা নিয়ে সতর্ক করি, বিশেষত যাদের মুখে ব্রেস বা ক্লিয়ার আলাইনার আছে। তাদের মুখের টিস্যুগুলো তুলনামূলকভাবে বেশি স্পর্শকাতর।”
তাই মাইক্রোওয়েভ ব্যবহার করতে হলে কিছু নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
মাইক্রোওয়েভে গরম করার পর পানি নাড়িয়ে ৩০ থেকে ৬০ সেকেন্ড অপেক্ষা করা উচিত। এতে অভ্যন্তরীণ চাপ কিছুটা কমে আসবে।
তাপমাত্রা যাচাই করতে রান্নাঘরের থার্মোমিটার ব্যবহার বা কাপের পাশে আঙুল ছুঁয়ে দেখতে হবে (পানিতে নয়)।
বন্ধ পাত্র ব্যবহার করা যাবে না। এতে চাপ জমে বিস্ফোরণ হতে পারে।
প্রশস্ত মুখবিশিষ্ট মাইক্রোওয়েভ-নিরাপদ কাপ ব্যবহার করতে হবে। এতে তাপ সমভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
শিশু ও প্রবীণদের সতর্ক করা জরুরি। কারণ তাদের প্রতিক্রিয়া সময় অনেক ধীর হওয়ায় ঝুঁকি বেশি।
গরম পানীয় পান করার আগে ‘ক্লিয়ার আলাইনার’ খুলে ফেলা জরুরি। কারণ তাপ আটকে গিয়ে মুখে আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে।

আরও পড়ুন