৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বিআরটিএ : ভিআইসি মেশিন দীর্ঘদিন অচল, খালি চোখে ফিটনেস পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানাধীন নতুনপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) অবস্থিত। এখানে বছরের বারোমাসই চলে ঘুষের কারবার। ঘুষ ছাড়া এখানে কোন কাজ হয়না। ঘুষে মিলে রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে রোড পারমিট, ফিটনেস, ট্যাক্স টোকেন, ডিজিটাল নাম্বারপ্লেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স সহ নানাবিধ কাজ। আর এ ঘুষ লেনদেনের মূল হোতা দালাল।
দালালদের সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি বাসের রুট পারমিট ও ফিটনেসের জন্য ১০ থেকে ৫০ হাজার, হিউম্যান হলার ৫ থেকে ৬ হাজার, ট্রাকের ক্ষেত্রে ২ থেকে ৩ হাজার, ড্রাম ট্রাকের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৫ হাজার, মিনি ট্রাক ২ থেকে ৩ হাজার, ছোট ভ্যান এক থেকে দেড় হাজার টাকা, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ৪০০ টাকা, টেম্পু থেকে -৫ হাজার টাকা বাড়তি ঘুষ হিসেবে দিতে হয়। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার জন্যও অতিরিক্ত ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা দিতে হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম বিআরটিএ কার্যালয়ে স্থাপিত তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভেহিকেল ইন্সপেকশন সেন্টার (ভিআইসি) মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। বহুদিন ধরে এই আধুনিক যন্ত্রটি অকেজো পড়ে থাকলেও, ফিটনেস সনদ দেওয়া হচ্ছে খালি চোখে যানবাহন পরিদর্শনের মাধ্যমে। যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনও পাচ্ছে ফিটনেস সনদ। এতে করে শুধু সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিই বাড়ছে না, হুমকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষের জীবনও।
ট্রান্সপোর্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফিটনেস বিহীন গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে দুর্ঘটনার হার আরও বেড়ে যাবে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে ১,০৪৮টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ১,১৪৬ জনের।
বিআরটিএ চট্টগ্রাম অফিস জানিয়েছে, অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট সিস্টেম চালু করে যানবাহনের ফিটনেস নবায়ন সহজ করা হলেও, যন্ত্রপাতি অচল থাকার কারণে পরীক্ষার মান নিয়ে থেকেই যাচ্ছে বড় প্রশ্ন। কর্তৃপক্ষ বলছে, যন্ত্র মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে কবে নাগাদ ভিআইসি মেশিন সচল হবে, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু জানাতে পারেনি কেউ।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক রায়হানা আকতার উর্থী জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নবায়নকৃত গাড়ির ফিটনেস ১৬০৬টি। সর্বমোট ফিটনেস বিহীন ২৮৭২২টি গাড়ি চলছে জেলা শহরগুলোতে। তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম বিআরটিএর পক্ষ থেকে নিয়মিত তিনজন ম্যাজিস্ট্রেড ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে অবৈধ এসব ফিটনেস বিহীন গাড়িগুলো জব্দ করার পাশাপাশি জরিমানা করা হচ্ছে। রায়হানা আকতার জানান, অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পদ্ধতিতে ফিটনেস নবায়ন চলছে। তবে যন্ত্রপাতি মেরামতের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা জানাতে পারেননি তিনি।এদিকে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে চট্টগ্রামে সড়ক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

 

আরও পড়ুন