অনলাইন ডেস্ক: জেন-জি বিক্ষোভে উত্তাল নেপালে রাজনৈতিক পালাবদলের পর নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন সুশীলা কার্কি। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ বিশ্বের অনেক নেতা তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে শপথ গ্রহণের পর শনিবার থেকেই দায়িত্বভার তুলে নিয়েছেন কার্কি। একদিকে যেমন হাসপাতালে গিয়ে আহতদের সঙ্গে দেখা করে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন, তেমনি প্রশাসনিক বিষয়েও নজর রয়েছে তার।এদিকে নতুন প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক ছন্দ ফেরানোর চেষ্টা চলছে নেপালে। প্রধানমন্ত্রী যদিও নিয়োগের পরই দেশের বেশির ভাগ অংশে আরোপিত কারফিউ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। তবে কাঠমাণ্ডুর কিছু জায়গায় সমাবেশ ও বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।অন্যদিকে বিক্ষোভের কারণে পাঁচ দিন ধরে বন্ধ থাকার পর কাঠমাণ্ডুতে গণপরিবহন পুনরায় চালু হয়েছে।অগ্নিকাণ্ডের পর বেঁচে যাওয়া সামগ্রী উদ্ধার করে শুরু হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও অন্যান্য দপ্তর প্রস্তুতির কাজ। ধারণা করা হচ্ছে, খুব তাড়াতাড়ি একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হবে।আহতদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি বিক্ষোভের সময় আহতদের সঙ্গে দেখা করেছেন শনিবার। ন্যাশনাল ট্রমা সেন্টার ও সিভিল সার্ভিস হাসপাতালে পৌঁছন শনিবার সকালে।হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং আহতদের অবস্থা সম্পর্কে খোঁজখবর নেন তিনি।এ ছাড়া বিক্ষোভের সময় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সামগ্রী পুরনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নতুন অফিসে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।বিক্ষোভের সময় সিংহ দরবারে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদের কার্যালয় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিংহ দরবারের উত্তর-পশ্চিম অংশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য নির্মিত নতুন ভবনে তার কার্যালয় প্রস্তুত করা হচ্ছে।সেনাবাহিনীসহ এবং সেখানে মোতায়েন কর্মীরা অগ্নিকাণ্ড থেকে থেকে বেঁচে যাওয়া আসবাব ও সরঞ্জাম, যেমন টেবিল, চেয়ার, সোফা ও কম্পিউটার পুরনো অফিস থেকে নতুন কার্যালয়ে স্থানান্তরিত করেছেন।তবে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সেখানে। পুড়ে যাওয়া যানবাহন, কাগজপত্র ও উপকরণ সরানোর কাজ চলছে।শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা আপাতত পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। সময় লাগবে। পরিষ্কার করার কাজ শেষ করে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করব আমরা।’
কাঠমাণ্ডুতে গণপরিবহন চলাচল শুরু
বিক্ষোভের কারণ কয়েক দিন ধরে বন্ধ থাকার পর কাঠমাণ্ডুতে গণপরিবহন শনিবার থেকে আবার চালু হয়েছে। কাঠমাণ্ডু ভ্যালি ট্রাফিক পুলিশ অফিসের মুখপাত্র ও পুলিশ সুপার (এসপি) দীপক গিরিকে উদ্ধৃত করে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা রাষ্ট্রীয় সমাচার সমিতি জানিয়েছে, আজ সকাল থেকে পাবলিক বাস, ট্যাক্সি ও অন্যান্য সরকারি যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।ট্রাফিক পুলিশ জানিয়েছে, কাঠমাণ্ডুর থেকে অন্যান্য জেলাগামী যাওয়া যানবাহনকে শনিবার সন্ধ্যা থেকে চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে।
নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের পর দেশের বেশির ভাগ অংশে কারফিউ ও নিষেধাজ্ঞার আদেশ প্রত্যাহার করা হলেও কাঠমাণ্ডুর বেশ কিছু জায়গায় সমাবেশ ও বিক্ষোভের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে।জেলা প্রশাসন কাঠমাণ্ডুর সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করার পর একটা বিজ্ঞপ্তিও জারি করেছে। এর আগে নেপাল সেনাবাহিনী কাঠমাণ্ডু উপত্যকায় যে কারফিউ জারি করেছিল, তা শনিবার সকাল থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।কাঠমাণ্ডুর ছয় স্থানে জমায়েত এবং অনশন, ধর্মঘট, অবস্থান, ঘেরাও, বিক্ষোভ ও সভা আপাতত নিষিদ্ধ থাকবে। সিংহ দরবার, সংসদ ভবন, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার আরজি
এদিকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা নেপালের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ওপর নজর দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে।অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, ইন্টারন্যাশনাল কমিশন অব জুরিস্টস, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব হিউম্যান রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ একাধিক সংস্থা সে দেশে মানবাধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
