নিজস্ব প্রতিবেদক: সরবরাহ কম থাকায় পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে খুচরা বাজারÑসবখানেই এখন ঊর্ধ্বমুখী পেঁয়াজের বাজার। এক সপ্তাহের ব্যবধানেই প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাদের বাড়তি গুণতে হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজারে এই মুহূর্তে আমদানি পেঁয়াজ নেই বললেই চলে। অক্টোবর পর্যন্ত বাজারে দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ থাকলেও এখন তা কমে গেছে। দেশি পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। এ কারণেই বেড়েছে দাম। নভেম্বরজুড়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকতে পারে। কেননা আগামী ডিসেম্বরে বাজারে আগাম পেঁয়াজ আসা শুরু হবে বলে তারা জানান। তবে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাদের অভিযোগ, ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম সহনীয় হলেও এক লাফে ২০ টাকার বেশি বৃদ্ধি অযৌক্তিক।
এদিকে চলতি সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজের দাম না কমলে আমদানির অনুমোদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার দুপুরে সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
আড়তদাররা মনে করছেন, দাম বাড়ায় ক্রেতারা সাময়িক কষ্টে পড়লেও আমদানি না হলে দেশের কৃষকেরা অবশ্য লাভবান হবেন। তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে পেঁয়াজের আবাদ ভালো হবে। এবার কৃষকেরা ভালো দাম পেয়েছেন। এভাবে চলতে থাকলে আমদানি নির্ভরতা কমবে, কৃষকেরাও লাভবান হবেন।
জানা গেছে, বহুবছর ধরে দেশের বাজার ছিল আমদানি পেঁয়াজনির্ভর। আমদানির বেশিরভাগই আসতো পাশের দেশ ভারত থেকে। পাশাপাশি পাকিস্তানি, চীনা ও মিসরের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে। তবে গত বছর থেকে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় পেঁয়াজ উৎপাদনের দিকে মনোযোগ বাড়ায় সরকার। সেটির সুফল মিলেছে। চট্টগ্রামেও বেশ ভালো পেঁয়াজ উৎপাদন হচ্ছে এখন।
খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিঞা মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, এখন বাজারে পুরোপুরি দেশি পেঁয়াজের সরবরাহ চলছে। দাম এ মাসে কিছুটা বেশি থাকবে। আমদানির অনুমতি দিলে দাম কিছুটা কমতে পারে, নইলে ডিসেম্বরের আগাম পেঁয়াজ আসা পর্যন্ত দাম উচ্চ থাকবে। চট্টগ্রামের বাজার মূলত আমদানি নির্ভর হলেও চলতি অর্থবছরে সেই প্রবণতা উল্টো।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজ এসেছে মাত্র ১৩ হাজার টন, যেখানে আগের অর্থবছরে একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার টন। অর্থাৎ আমদানি কমেছে প্রায় ৯৫ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরে চট্টগ্রাম জেলায় পেঁয়াজ চাষ হয়েছিল ৯১ হেক্টর জমিতে, উৎপাদন ছিল ৬৭১ টন। চলতি অর্থবছরে আবাদ বেড়ে ১০২ হেক্টর জমিতে নির্ধারিত হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৯২ টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর স্থানীয় উৎপাদনই চট্টগ্রামের বাজারের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
চাক্তাই শিল্প ও ব্যবসায়ী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক আহসান খালেদ বলেন, বাজারে সাময়িক চাপ তৈরি হয়েছে। কৃষকেরা এবার লাভবান হয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ডিসেম্বরের আগাম পেঁয়াজ ও ফেব্রুয়ারির সরবরাহ আসার পর দাম আবার স্থিতিশীল হবে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, গত অক্টোবর মাসজুড়ে খুচরা পর্যায়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছিল পেঁয়াজ। কিন্তু চলতি নভেম্বর মাসের শুরু থেকেই মানভেদে খুচরা বাজারে ১১০-১২০টাকায় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। পাইকারি বাজারে দাম ১০০ টাকার আশপাশে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোতে আকার ও মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ৭০ থেকে ৭৫ টাকার মধ্যে। সবমিলিয়ে খুচরা বাজারে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।




