আন্তর্জাতিক ডেস্ক: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে ২০ লাখের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের এই বন্যায় শুধু সিন্ধু প্রদেশেই আরও ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের প্রধান ইনাম হায়দার মালিক এই তথ্য জানিয়েছেন।হায়দার মালিক সতর্ক করে বলেন, আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।আন্তর্জাতিক মেডিকেল কর্পসের আজ শুক্রবার পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত দেশজুড়ে বর্ষায় ৯০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছেন।জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পাকিস্তানের বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে নদীতে পানি উপচে পড়ছে। সমালোচকেরা বলছেন, সরকারের অবহেলা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার যথেষ্ট বিনিয়োগ না করায় এই বিপর্যয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।বন্যায় পাকিস্তানে হাজার হাজার বাড়িঘর ও কৃষিজমি ধ্বংস হয়েছে। পাকিস্তানের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন। তাঁদের জন্য এই দুর্যোগ ভয়াবহ আঘাত হয়ে এসেছে।
ডুবে যাওয়ার ঝুঁকি সত্ত্বেও অনেক পরিবার ভিটেমাটি রক্ষা করতে ঘরে থেকে গিয়েছিল। উদ্ধারকর্মীরা নৌকা নিয়ে গ্রামে গ্রামে গিয়ে মানুষ ও তাঁদের গবাদিপশু সরিয়ে নিতে বাধ্য হন। কিন্তু এতে নতুন ঝুঁকিও তৈরি হয়েছে। ছোট নৌকা তীব্র স্রোতে উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।গত মঙ্গলবার সিন্ধু নদে এমনই একটি উদ্ধারকারী নৌকা ডুবে অন্তত ৯ জন মারা গেছেন। কয়েক দিন আগে জালালপুর পিরওয়ালা শহরের কাছে অনুরূপ ঘটনায় পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
বন্যা শুধু পাকিস্তান নয়, পাশের দেশ ভারতেও তাণ্ডব চালাচ্ছে। সেখানে অন্তত ৩০ জন মারা গেছেন এবং সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা দুর্গত এলাকায় টন টন ত্রাণসামগ্রী—কম্বল, তাঁবু, পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র ইত্যাদি পাঠিয়েছে। তবে মালিক বলেছেন, পানি নামতে কয়েক সপ্তাহ লেগে যাবে। তারপরই হাজার হাজার গ্রাম ও কৃষিজমিতে পুনর্বাসন কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।জাতিসংঘ ইতিমধ্যে পাকিস্তানের বন্যা মোকাবিলায় ৫০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও অর্থসহায়তা ও বিশেষ দুর্যোগ মোকাবিলা টিম পাঠিয়েছে।ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে পাকিস্তান জলবায়ু পরিবর্তনে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তীব্র গরম, অতিবৃষ্টি ও হিমবাহ গলে নতুন হ্রদ তৈরি হয়েছে—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ভয়াবহ।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যায় পাকিস্তানে ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। সেই বছর তিন কোটির বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সেটি পাকিস্তানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াকর বন্যা ছিল।সর্বশেষ বন্যার পর পাকিস্তান সরকার জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় কর্মকর্তাদের ৩০০ দিনের পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশ দিয়েছেন।
