১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা

সাইফুল ইসলাম সাইফ : বর্তমান বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপটে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা যে কতটা বেড়েছে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না। নতুন সতেজতার বার্তা নিয়ে আসে বর্ষা। বৃষ্টির স্পর্শে প্রকৃতি জেগে ওঠে, সবুজে ছেয়ে যায় নগর আর গ্রাম। এই বর্ষা মৌসুম হলো বৃক্ষরোপণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়, কারণ তখন মাটি থাকে আর্দ্র ও কোমল। এমন পরিবেশে গাছ সহজে শিকড় বিস্তার করতে পারে এবং বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেশি থাকে।
বৃক্ষ হলো প্রকৃতির ফুসফুস। গাছ বাতাসে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে পরিবেশকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে। এক হেক্টর বনভূমি বছরে প্রায় ২.৫ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে সক্ষম। এর ফলে শুধু বায়ুদূষণই কমে না, মানুষের শারীরিক স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। বৃক্ষ ভূমিক্ষয় রোধ করে, ভূগর্ভস্থ পানি ধরে রাখে এবং খরা ও বন্যার প্রভাব হ্রাস করে। বর্ষায় লাগানো গাছ দ্রুত বেড়ে ওঠে, কারণ এ সময় পর্যাপ্ত পানি ও সঠিক তাপমাত্রা থাকে। ফলে গাছের শিকড় মাটিতে শক্তভাবে গাঁথে এবং তা টিকে থাকে দীর্ঘদিন।
বিশ্বব্যাপী নগরায়ন, কৃষি সম্প্রসারণ এবং কাঠের অতিরিক্ত ব্যবহার গাছের সংখ্যা হ্রাস করছে। এই অপূরণীয় ক্ষতি পূরণে একমাত্র পথ হলো বৃক্ষরোপণ। গবেষণায় বলা হয়, একটি পূর্ণবয়স্ক গাছ বছরে প্রায় ১ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করতে পারে। যদি আমরা বর্ষাকালে সংগঠিতভাবে গাছ লাগাতে পারি, তবে তা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সহনীয় ও বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলবে।
গাছ শুধু পরিবেশ নয়, সমাজ ও অর্থনীতির ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে। গাছপালা পরিবেশে অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বায়ু পরিষ্কার রাখে। মাটির গুণাগুণ উন্নত করে ও ভূমিক্ষয় রোধ করে। একই সঙ্গে বিভিন্ন গাছ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সহায়তা করে, কারণ তারা বহু প্রজাতির পাখি, প্রাণী ও পোকামাকড়ের আবাসস্থল। অর্থনৈতিক দিক থেকেও গাছ মূল্যবান সম্পদ দেয়Ñফল, কাঠ, ভেষজ ও অন্যান্য উপাদান।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বর্ষা মৌসুম আরও গুরুত্বপূর্ণ। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় জুড়ে গড় বৃষ্টিপাত ৭০ শতাংশের বেশি হয়। এ সময় মাটি থাকে আর্দ্র ও উপযোগী। সরকার প্রতি বছর এই সময়টিকে ঘিরে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করে। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এই উদ্যোগে শরিক হয়। শহর ও গ্রামে স্কুল, কলেজ, সামাজিক সংগঠন, কৃষক ও প্রবাসীরা একত্র হয়ে গাছ লাগান। বিভিন্ন এলাকায় মেলা ও প্রচারাভিযানের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরি করা হয়।
বর্ষায় যেসব গাছ রোপণ করা উচিত, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফলজ, বনজ, ঔষধি ও শোভাবর্ধক প্রজাতি। আম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, নারিকেল ইত্যাদি ফলজ গাছ যেমন পুষ্টি ও আয় বাড়ায়, তেমনি মেহগনি, শাল, গামারি প্রভৃতি বনজ গাছ কাঠ ও জ্বালানির উৎস হয়ে ওঠে। নিম, অর্জুন, হরিতকি, তুলসী ইত্যাদি ঔষধি গাছের রয়েছে বহুমাত্রিক উপকারিতা। আবার কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, কনকচূড়ার মতো শোভাবর্ধক গাছ প্রকৃতিকে করে তোলে আরও মোহনীয়।
তবে বৃক্ষরোপণে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছেÑযেমন সচেতনতার অভাব, অতিবৃষ্টিতে চারা নষ্ট হওয়া, নিয়মিত পরিচর্যার ঘাটতি, এবং ভূমির সংকট। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজন স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ, টেকসই পরিকল্পনা ও নিয়মিত তদারকি। বিদ্যালয় পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং সরকারি-বেসরকারি সমন্বয়ে যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে। বৃক্ষরোপণ নিছক কোনো প্রকল্প নয়, এটি এক সামাজিক, নৈতিক ও পরিবেশগত দায়িত্ব। আসুন, বর্ষার এই সুযোগ কাজে লাগাইÑগাছ লাগিয়ে জীবন ও প্রকৃতিকে বাঁচাই। লেখক- প্রকাশক, newschattogram24.net.

আরও পড়ুন