১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

দুশ্চিন্তায় ভারত : শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশের পর এবার নেপাল

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের প্রতিবেশী নেপালে সহিংস বিক্ষোভে সরকার পতন হয়েছে। ভারতের এই কৌশলগত প্রতিবেশী দেশের অস্থিরতা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে দিল্লি, যা দেশটিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক সংকটকে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করার প্রতিবাদে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জনেরও বেশি নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করেন। প্রতিবাদকারীরা পার্লামেন্টে হামলা চালিয়ে কয়েকজন রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিলে সেনাবাহিনীকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য নামানো হয় এবং দেশব্যাপী কারফিউ জারি করা হয়।অনেকে বলেন, কাঠমাণ্ডুর এই দৃশ্যগুলো অনেকটা গত বছর বাংলাদেশের অস্থিরতা কিংবা ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতির মতো।
ভারতের বিশেষ নজর
বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা ভারতের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হলেও নেপালের সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক বেশ ভালো। কারণ দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, কৌশলগত ও অর্থনৈতিক যোগসূত্র রয়েছে। নেপালের সঙ্গে ভারতের ১,৭৫০ কিলোমিটারেরও বেশি খোলা সীমান্ত রয়েছে, যা উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, সিকিম, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন—‘নেপালের সহিংসতা হৃদয়বিদারক। তরুণদের প্রাণহানি আমাকে ব্যথিত করেছে। নেপালের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও সমৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’ তিনি মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের নিয়ে জরুরি বৈঠকও করেন।বিশ্লেষকরা বলছেন, যেমনভাবে ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত অপ্রস্তুত হয়েছিল, তেমনি নেপালের এই পরিস্থিতিও তাদের বিস্মিত করেছে। বিশেষ করে ওলির দিল্লি সফরের ঠিক এক সপ্তাহ আগে তার পদত্যাগ ঘটনাটিকে আরো তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।
ভারতের জন্য কৌশলগত গুরুত্ব
নেপালের অস্থিরতা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ দেশটির কৌশলগত অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল অশোক মেহেতা বলেন, চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ড নেপালের সীমানার ওপারেই অবস্থান করছে।
ইন্দো-গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রবেশের পথ সরাসরি নেপালের ভেতর দিয়ে গেছে।
ভারতে আনুমানিক ৩৫ লাখ নেপালি কাজ করেন বা বসবাস করেন, যদিও প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে। ১৯৫০ সালের চুক্তির অধীনে নেপালিরা ভিসা বা পাসপোর্ট ছাড়াই ভারতে যেতে বা কাজ করতে পারেন। এ ছাড়া প্রায় ৩২,০০০ গুর্খা সেনা বিশেষ চুক্তির ভিত্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত।নেপালের মুকতিনাথ মন্দিরসহ বহু হিন্দু তীর্থস্থান ভারতের ভক্তদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। অপরদিকে কাঠমাণ্ডু ভারতের রপ্তানির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। দুই দেশের বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ৮.৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।
চীন-ভারত প্রতিযোগিতা ও ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নতুন সরকার বা নেতৃত্বে কে আসবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। ভারতকে খুব সাবধানে কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের মতো আরেকটি পরিস্থিতি তৈরি না হয়।নেপাল ও ভারতের মধ্যে অতীতে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। ২০১৯ সালে ভারতের মানচিত্রে নেপাল দাবি করা এলাকা যুক্ত হওয়ায় বিরোধ তীব্র হয়। পরে নেপাল নিজস্ব মানচিত্র প্রকাশ করে। ভারত ও চীন সম্প্রতি বিতর্কিত সীমান্তের এক পয়েন্টে বাণিজ্য পুনরায় শুরু করেছে, যা নিয়েও নেপালের আপত্তি রয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগীতা থাপলিয়াল বলেন, ‘নেপালে তরুণদের জন্য সুযোগ কম। ভারত যদি বেশি ফেলোশিপ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেয়, তাহলে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) কার্যত অচল হয়ে পড়ায় প্রতিবেশী অঞ্চলে একের পর এক রাজনৈতিক অস্থিরতা সামলানো ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মেহেতা বলেন, ‘ভারত বড় শক্তি হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেটি অর্জন করতে হলে আগে নিরাপদ ও স্থিতিশীল প্রতিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।’

আরও পড়ুন