২৭শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রামে সংলাপে প্রশ্ন: জুলাই অভ্যুত্থানের নারীরা দৃশ্যমান নেই কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ থাকলেও পাঁচ আগস্টের পর তারা কেন দৃশ্যমান নেই- চট্টগ্রামে এক মুক্ত সংলাপে এমন প্রশ্ন উঠে এসেছে। সংলাপে বক্তারা বলেছেন, এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। কারণ, নারী ও তরুণদের অংশগ্রহণ ছাড়া প্রকৃত রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী ও তরুণদের ভূমিকা নিশ্চিত করা, দুর্নীতি রোধ এবং জবাবদিহিতার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে তরুণদের অংশগ্রহণ জোরদার করা সময়ের দাবি।শনিবার দুপুরে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে: রাজনৈতিক পরিসরে নারী এবং তরুণদের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক এক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
নেদারল্যান্ড দূতাবাসের সহযোগিতায় ‘রাজনীতিতে নারী ও যুবাদের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক চলমান প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের চট্টগ্রামের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন।
মুক্ত সংলাপে দেওয়া বক্তব্যে বিএনপি নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নারীর অধিকার রক্ষায় সকল রাজনৈতিক শক্তির ঐক্য প্রয়োজন। আগামী নির্বাচনে আগের চেয়ে আরও বেশি নারী প্রার্থী দেখা যাবে। গত ১৬ বছরে বিএনপির ভেতরে অনেক নারী রাজনৈতিক পরিচিতি গড়ে তুলেছেন। আমরা চাই তাদের পূর্ণাঙ্গ নেতৃত্বে রূপান্তরের সুযোগ দিতে।বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অবলম্বন করে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, ভালো মেয়েরা রাজনীতি করে না— এ ধারণা এখন বদলাচ্ছে, যা আমাদের গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক।
চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির শাহজাহান চৌধুরী বলেন, দেশের প্রায় সব ঐতিহাসিক আন্দোলনে নারীরা সক্রিয় ছিলেন, কিন্তু মূলধারার রাজনীতিতে তাদের প্রকৃত অন্তর্ভুক্তি ঘটেনি। এটা অবশ্যই বদলাতে হবে। গণতন্ত্র আগে না-কি নারীর অংশগ্রহণ আগে, এ বিভাজনের দরকার নেই। দুটি বিষয় সমান্তরালভাবে এগিয়ে নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সভাপতি অশোক সাহা বলেন, জুলাই আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী তরুণদের প্রতিবাদ হিসেবে গণ্য হওয়া উচিত। এবার তরুণদের অংশগ্রহণ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ছিল। দীর্ঘদিনের পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি এক ধরনের রাজনৈতিক ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যতদিন না আমরা নারীবিদ্বেষ এবং আদিবাসীদের প্রতি ঘৃণার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবো, ততদিন ঐক্য সম্ভব নয়। এখন যুক্ত হয়েছে সাইবার হয়রানি— এই ঘৃণা দূর না হলে কার্যকর গণতন্ত্র স্থাপিত হবে না।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার প্রধান সমন্বয়কারী জুবাইরুল হাসান আরিফ বলেন, এনসিপি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা এমন একটি প্রস্তাব দিয়েছি, যাতে ১০০টি সংসদীয় আসনে শুধু নারীরা সরাসরি ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলো এখনো বুঝতে পারেনি, আন্দোলনের পর সমাজ কতটা বদলে গেছে। তাদের অবস্থান এখনো নারী ও তরুণদের দাবির থেকে অনেক দূরে।
সিজিএস সভাপতি জিল্লুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সংলাপে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক উপমন্ত্রী মনিস্বপন দেওয়ান এবং গণসংহতি আন্দোলন চট্টগ্রামের সমন্বয়কারী হাসান মারুফ রুমিও বক্তব্য দেন। সংলাপে চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় ২০০ প্রতিনিধি অংশ নেন।

আরও পড়ুন