২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪৪ ধারা জারি :  শিক্ষার্থী-স্থানীয় সংঘর্ষ 

চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করেছে উপজেলা প্রশাসন। এসময় সংঘাতময় এলাকায় সকল প্রকার সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশী অস্ত্র বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় ৫ বা তার বেশি ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।রবিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন এ আদেশ দেন।
আদেশে বলা হয়, আজ সকাল সাড়ে ১১টায় হাটহাজারী উপজেলাধীন ফতেপুর ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশে স্থানীয় জনসাধারণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পরস্পর মুখোমুমি ও আক্রমণাত্মক হয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে উভয়পক্ষ আক্রমণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেট বাজারের পূর্ব সীমা থেকে পূর্বদিকে রেলগেট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে আজ দুপুর ২টা থেকে আগামীকাল (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৪৪ ধারার আদেশ জারি করা হয়েছে।
ওই সময়ে উল্লিখিত এলাকায় সকল প্রকার সভা সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশি অস্ত্র ইত্যাদি বহনসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচ বা তার অধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বলেও আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে, শনিবার(৩০ আগস্ট) রাত সোয়া ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক নারী শিক্ষার্থী ২ নম্বর গেট সংলগ্ন একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। ওই শিক্ষার্থী রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় প্রবেশ করতে গেলে দারোয়ানের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দারোয়ান তাকে মারধর করেন।
এ ঘটনায় খবর পেয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী সেখানে গেলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে স্থানীয়রা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সংঘর্ষ বাঁধে। পরে স্থানীয়রা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হল মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে সংঘর্ষে জড়ান।
রাত দেড়টার দিকে ২ নম্বর গেট এলাকায় সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, এ সময় বহু শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। এ সংঘর্ষে অন্তত ৬০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ২০–২১ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তবে তারা বিপদমুক্ত রয়েছেন।
এদিকে, শনিবারের রাতের সংঘর্ষের জেরে রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তরা আবাসিক ২ নম্বর গেটে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এসময় প্রশাসনের উপস্থিতি ছিল না বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এসময় শিক্ষার্থী, স্থানীয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ ৩০ জনেরও বেশি আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সময় বিভিন্ন দিক থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে স্থানীয় বাসিন্দারা। শিক্ষার্থীরাও জড়ো হয়ে হামলা প্রতিরোধের চেষ্টা চালায়। তবে স্থানীয়দের সংখ্যা বেশি হওয়ায় শিক্ষার্থীরা বারবার পিছু হটে এবং অনেক শিক্ষার্থী ইটের আঘাতে আহত হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির একজন সদস্য ও ঘটনাস্থলে কর্তব্যরত সাংবাদিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনও আহত হন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শনিবারের সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে যেসব শিক্ষার্থীরা ভাড়ায় থাকেন, তাদের অবরুদ্ধ করে রাখে স্থানীয়রা। সেই খবর পেয়েই মূলত তারা একত্রিত হয়ে উত্তরা আবাসিক এলাকায় যান। এ সময় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এছাড়া ইটপাটকেলও নিক্ষেপ করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আহত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে সংঘর্ষের জেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে জানিয়ে চবি উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলার ঘটনায় বহু শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে অনেকের আজ পরীক্ষা ছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।’অন্যদিকে স্থানীয়দের অভিযোগ, শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়েছে। এতে তাদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যার ফলে তারা প্রতিরোধ করতেই শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়েছেন।

আরও পড়ুন