অনলাইন ডেস্ক : যুক্তরাজ্যের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন শাবানা মাহমুদ। অভিবাসন, শরণার্থী, পুলিশ ও জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো এখন তার হাতে। দেশটিতে যখন ডানপন্থী রিফর্ম পার্টির জনপ্রিয়তা বাড়ছে, তখনই এই গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন লেবার পার্টির শীর্ষ এই নেতা। তাই প্রশ্ন উঠেছে, কে এই শাবানা মাহমুদ? এর আগে তিনি যুক্তরাজ্যের আইনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন।উপপ্রধানমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রেইনার পদত্যাগ করার পর গত শুক্রবার মন্ত্রিসভার বড় রদবদলের অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হয় শাবানাকে। এটি যুক্তরাজ্যের শীর্ষ চারটি দপ্তরের একটি। আর এই প্রথম কোনো মুসলিম নারী সে দায়িত্বে এলেন।শাবানার জন্ম বার্মিংহামে।তার বাবা–মায়ের বাড়ি পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। ফিলিস্তিনিদের অধিকারের বিষয়ে তিনি বরাবরই সোচ্চার। রাজনীতির শুরুর দিক থেকেই ইসরায়েল– ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান ছিল স্পষ্ট। ২০১০ সালে পার্লামেন্ট সদস্য হওয়ার পর থেকে ওয়েবসাইটে নিজের নানা কার্যক্রম তুলে ধরেন তিনি।গাজায় ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে শুরু করে অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি, ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে ভোট—সবই তার রাজনৈতিক অবস্থানের অংশ। এমনকি অবৈধ ইসরায়েলি বসতি থেকে সংগ্রহ করা পণ্য বিক্রি বন্ধে সুপারমার্কেটের বাইরে প্রতিবাদেও অংশ নিয়েছিলেন তিনি।তবে এসব কারণে ব্রিটিশ ইহুদি সংগঠনগুলোর সমালোচনারও মুখে পড়তে হয়েছে তাকে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাবানার অবস্থান কিছুটা বিতর্কও তৈরি করেছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির উত্থাপিত প্রস্তাবে তিনি ভোট দেননি।দলের নেতৃত্বের প্রতি অনুগত থেকে এই সিদ্ধান্ত নেন শাবানা। এর ফলে তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখমেদ ইয়াকুব শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলেছিলেন। ২০১৯ সালের নির্বাচনে যেখানে শাবানার জয় ছিল বিশাল ব্যবধানে, এবার তা নেমে এসেছে মাত্র সাড়ে তিন হাজারে।ফিলিস্তিনপন্থী প্ল্যাটফর্মগুলোতেও তার সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই তাকে ‘ফিলিস্তিনবিরোধী’ বলে অভিহিত করছেন। তবে শাবানা লেবার ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইনের সক্রিয় সদস্য এবং সম্প্রতি ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে করা আহ্বানেও তিনি নাম লিখিয়েছেন।নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক অভিযানে পুলিশের পাশে দাঁড়ানোয় শাবানা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। শনিবার লন্ডনে একদিনেই প্রায় ৯০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সময় পুলিশ সদর দপ্তরে বিশেষ নিয়ন্ত্রণকক্ষে বসে থাকা শাবানার ছবিও ছড়িয়ে পড়ে।সমালোচকদের প্রশ্ন, তিনি কি ফিলিস্তিনের পক্ষে দৃঢ় থাকবেন, নাকি কঠোর নিরাপত্তানীতির সঙ্গে আপস করবেন?
সর্বশেষ জনমত জরিপ বলছে, লেবার পার্টির জনপ্রিয়তা কমছে। আগামী সাধারণ নির্বাচন ২০২৯ সালের গ্রীষ্মের মধ্যে হওয়ার কথা। এর আগে শাবানা মাহমুদের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হবে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা—একদিকে ফিলিস্তিনপন্থী অবস্থান, অন্যদিকে কঠোর স্বরাষ্ট্রনীতি।
