মোহাম্মদ জাহেদ উল্লাহ চৌধুরী: ওএমএস চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রম চলছে অতীতের আওয়ামী লীগ সরকারের মতো। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভালোমানের চাল পাল্টিয়ে নিম্নমানের চাল বিক্রি করা হয়। এই অপকর্মের সাথে খাদ্য পরিদর্শকদের যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকজন খাদ্য পরিদর্শক সিন্ডিকেট এই গোঁজামিলের সঙ্গে জড়িত।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে নগরীতে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিজন ডিলার দিনে এক টন করে চাল ও এক টন আটা বরাদ্দ পায়। ভোক্তাদের কাছে প্রতিকেজি চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা দরে বিক্রি করছেন ডিলাররা। এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য খাদ্য বিভাগের ৩২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে (ট্যাগ অফিসার) দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু গরীব শ্রেনীর মানুষ সকালে গিয়ে লাইন ধরতে হয়। না হয় চাল পাওয়া যায় না। একটু দেরি হলে চাল শেষ হয়ে গেছে বলে ফেরত দেয়।
ওএমএসের চাল-আটার চুরি ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়সার আলী। তিনি বলেন, সরকারি চাল-আটা চুরির বিষয়ে কোনো ছাড় নেই। এজন্য বিশেষ মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
পাথরঘাটা নজুমিয়া লেনের এক ব্যক্তি বলেন, বুধ-বৃহস্পতিবার দুই দিন ডিলারের দোকানে গিয়ে তিনি চাল পাননি। অথচ দিনে কমপক্ষে ১০০ জনকে চাল দেওয়ার কথা। সেখানে ৫০-৬০ জনের বেশি লোককে চাল দেওয়া হয় না।
সরাইপাড়া ভেলুয়ারদিঘি ও বহদ্দারহাট বাড়ির পুকুর পাড় এলাকায় ডিলারের দোকান ঘুরে আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে একই অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব কারণে হতদরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, ওএমএস চাল বিক্রি কার্যক্রম দেখভাল করার দায়িত্ব জেলা খাদ্য বিভাগের। পরিদর্শকদের সঙ্গে ডিলারদের যোগসাজশে চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। চাল চুরি ঠেকাতে না পেরে শেষে ‘বিশেষ মনিটরিং’ টিম গঠন করেছে আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক।
অভিযোগ উঠেছে, খাদ্য পরিদর্শকদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভালোমানের চাল পাল্টিয়ে নিম্নমানের চাল বিক্রি করা হয়। কয়েকজন খাদ্য পরিদর্শক সিন্ডিকেট এই গোঁজামিলের সঙ্গে জড়িত। গত সরকারের আমলের ক্ষমতাভোগী সেই পরিদর্শকেরা ফের বদলি হয়ে এসে পুরোনো কায়দায় গোঁজামিল ও জালিয়াতি চক্র গড়ে তুলেছে।
দুইজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, ন্যায্যমূল্যের চাল বিক্রি চলছে অতীতের আওয়ামী লীগ সরকারের মতো। সরকারের নয়, ডিলারের মর্জি-মাফিক চলে চাল বিক্রি। সরকারি ভালোমানের চাল বস্তা বদল করে বাইরে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া দিনে ৫০-৬০ জনকে চাল দিয়ে বলে শেষ হয়ে গেছে। অথচ দিনে একশ জনকে চাল ও আটা বিক্রির কথা।উপকারভোগী এবং স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ ছাড়াও খাদ্য বিভাগের পরিদর্শনেও বড় জালিয়াতি ও গোঁজামিলের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে ১০০ জনের স্থলে ৫০-৬০ জন লোক চাল পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে জানান জেলা খাদ্য অধিদপ্তরের উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (কারিগরি) রাজীব কুমার দে। তিনি বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। আটা বিক্রির বিষয়ে তিনি বলেন, নিম্নআয় অধ্যুষিত এলাকায় চাল-আটার চাহিদা বেশি থাকে। আর আটার চাহিদা একটু কম থাকে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, নগরীর ২নং জালালাবাদ ওয়ার্ডে ওএমএসের চাল-আটা বিক্রিতে অনিয়ম ধরা পড়ে বিশেষ মনিটরিং কমিটির হাতে। সরকারি খাদ্যগুদামের ভালোমানের চাল পাল্টিয়ে খাবার অনুপযোগী নিম্নমানের চাল বিক্রি করার। বিক্রির আগে এক টন চাল মজুত থাকার কথা ছিল। কিন্তু ১৫৩.৬৫০ কেজি চাল ও ১৩৮ কেজি আটা কম ছিল।
ওই সময়ে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক এসএম কায়ছার আলী বলেছিলেন, ভিডিও ফুটেজে চালের মান দেখে বিস্মিত হয়েছি। এগুলো গরু-ছাগলে খাবারের অযোগ্য। এই চাল খাদ্য বিভাগের দেওয়া নয়। পরে ওই ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা হয়। পরে ২২নং এনায়েত বাজার ওয়ার্ডের ডিলার মেসার্স মা এন্টারপ্রাইজের দোকানে ১০০০ কেজি আটার বদলে ২৫০ কেজি আটা পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুইজন ডিলার বলেন, প্রতি ডিলারকে প্রতিদিন চাল ও আটার বিক্রিতে এক হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়। না হলে মাস্টাররোলে স্বাক্ষর করতে গড়িমসি করে। এছাড়াও খাদ্য পরিদর্শক ও ট্যাগ অফিসারদের দুপুরে চা-নাস্তা ও ভাত খাওয়াতে হয়। দিতে হয় গাড়ি ভাড়াও। ঘুষের টাকা তুলতে বাধ্য হয়ে কেউ কেউ কিছুটা চাল-গম বাইরে বিক্রি করার চেষ্টা করে।