৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

আসকের বিবৃতি: বিপন্ন গণমাধ্যমের স্বাধীনতা-‘মব জাস্টিস’ বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক: আওয়ামী লীগ আমলের মতোই এখনো দেশে নির্বিচারে গ্রেপ্তার, গুম, হেফাজতে মৃত্যু, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নারীর প্রতি সহিংসতা, সংবাদপত্র ও সাংবাদিক হয়রানি অব্যাহত রয়েছে বলে মনে করছে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি আরো সংকটময় হয়েছে। যা ঘটছে, তা মূলত দমনপীড়নের নতুন রূপ। অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ মূল্যায়ন তুলে ধরে সংস্থাটি।
আসক বলছে, গত বছর জুলাই-আগস্টের গণজাগরণে ছাত্র-জনতা যখন রাজপথে নামে, তখন তাদের কণ্ঠে ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, স্বৈরাচারের পতন এবং একটি মানবিক, জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থার দাবি। সেই জাগরণে আসে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন। ঠিক এক বছর পর আন্দোলনের চেতনাই আজ সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত।আসক জানিয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ব্যর্থতার সুযোগে সাধারণ জনগণ নিজেরাই শাস্তি দিতে উদ্যোগী হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ‘মব জাস্টিস’ বা গণপিটুনির ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর পেছনে রাজনৈতিক উত্তেজনা ও সামাজিক বিভাজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ সহিংসতায় বহু নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েছে।
মিথ্যা ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা, লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় বিচার না হওয়ায় এবং অপরাধীদের দৃশ্যমান শাস্তি না দেওয়ায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বাড়ছে।
সংস্থাটি জানায়, নারীর প্রতি সহিংসতা এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটি কাঠামোগত সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। নারীর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ, পারিবারিক সহিংসতা, এমনকি পোশাক বা মতপ্রকাশের কারণে অপমান ও সামাজিক বয়কট এখন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে।
আসক উদ্বেগ প্রকাশ করে জানায়, শিক্ষাঙ্গনেও মতপ্রকাশ ও প্রতিবাদের কারণে শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার, হুমকি ও অন্যায় আচরণের ঘটনা ঘটেছে। এটি শুধু শিক্ষার অধিকার নয়, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর আঘাত বলে সংস্থাটি মন্তব্য করেছে।
সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের ওপর দমনপীড়ন এক বছরেও থামেনি। আসকের তথ্য বলছে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার, সংবাদপত্র বন্ধ, সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধের হুমকি ও সাইবার হয়রানির ঘটনা ঘটছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রশ্নে সরকার যে এখনো সংবেদনশীল নয়, সেটি পরিষ্কার বলেই দাবি করেছে আসক।
এ সংকটপূর্ণ বাস্তবতায় গুম প্রতিরোধ সরকারের পদক্ষেপকে আশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করেছে আসক। সংস্থাটি বলছে, সরকার সম্প্রতি আন্তর্জাতিকভাবে গুম প্রতিরোধ কনভেনশনে সই করেছে। অতীতে ঘটে যাওয়া গুমের ঘটনা তদন্তের জন্য একটি ‘গুম কমিশন’ গঠন করেছে, যা আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এখনো পুনর্গঠিত না হওয়ায় সরকার সত্যিকারের দায়বদ্ধতা দেখাচ্ছে না বলেও সংস্থাটি মনে করে।
সরকারের তরফে একটি সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে আসক। তারা বলেছে, এটি একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য দরজা খুলে দিতে পারে।
বিবৃতিতে আসক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বন্ধ, সংখ্যালঘু ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত, গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা এবং প্রতিটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জবাবদিহি প্রতিষ্ঠায় সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

আরও পড়ুন