৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

অচলাবস্থা কেটে ফের কর্মমুখর কাস্টম হাউস

নিজস্ব প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির প্রতিবাদে কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গত পাঁচ দিন (১৫ মে থেকে ১৯ মে) ধরে চলমান কলমবিরতি কর্মসূচি সাময়িকভাবে স্থগিত করার পর অচলাবস্থা ভেঙে নতুন উদ্যমে জেগেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্রুতগতির পদচারণা, ফাইলের স্তূপ সরানো এবং কম্পিউটার কি-বোর্ডের নিরন্তর শব্দে মুখরিত কাস্টম প্রাঙ্গণ, যা গতকালের নিরবতার সম্পূর্ণ বিপরীত চিত্র।
মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত কাস্টম হাউসের প্রতিটি বিভাগে দেখা যায় কর্মচাঞ্চল্য। কর্মবিরতির কারণে জমে থাকা বিপুল সংখ্যক ফাইল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য কর্মকর্তারা নিরলসভাবে কাজ করছেন। আমদানি, রপ্তানি, অ্যাসেসমেন্ট – প্রতিটি শাখায় যেন এক অদৃশ্য প্রতিযোগিতা চলছে দ্রুততম সময়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পণ্যের ছাড়পত্রের আশায় আসা ব্যবসায়ী এবং তাদের প্রতিনিধিদের আনাগোনাও চোখে পড়ার মতো।
আমদানি প্রক্রিয়াকরণে অপেক্ষারত ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে পণ্য খালাস করতে না পারায় আমরা ব্যবসায়িকভাবে বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। আজ (২০ মে) কাস্টমসে এই কর্মতৎপরতা দেখে কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছি। আশা করি, দ্রুতই আমাদের কনটেইনারগুলো বন্দর থেকে বের করতে পারব।’
চট্টগ্রাম কাস্টমস এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কর্মকর্তাদের কাজে ফেরা নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে বন্দরে যে বিশাল কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে কাস্টমস এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। আটকে থাকা কনটেইনারগুলো দ্রুত খালাসের উদ্যোগ নেয়া জরুরি।’
বন্দর সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় বন্দর অভ্যন্তরে ৯ হাজার ২৪৩ টিইইউস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। বর্তমানে জেটি ও বহির্নোঙরে ১১১টি জাহাজ অবস্থান করছে, যার মধ্যে ৫৭টি অপারেশনবিহীন অবস্থায় রয়েছে। গত ৩০ এপ্রিল বন্দরে কনটেইনারের সংখ্যা ছিল ৩৫ হাজার ৯৭৩ টিইইউস, যা গত সপ্তাহে বেড়ে ৪০ হাজার ৭৮ টিইইউসে দাঁড়ায়।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ৮১৩ টিইইউস কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো এবং ১১৫ টিইইউস ঢাকা আইসিডি থেকে বন্দরে এসেছে। অফডকগুলো থেকে রপ্তানিপণ্য ভর্তি ২ হাজার ১৭৮ টিইইউস এবং খালি ৭৫২ টিইইউস কনটেইনার বন্দরে আসে। বিপরীতে, ৩ হাজার ৪৩০ টিইইউস কনটেইনার জাহাজীকরণ করা হয়েছে এবং অন্যান্য স্থানেও কনটেইনার স্থানান্তর করা হয়েছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষও কাস্টমসের কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ায় আশাবাদী। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি স্থগিত হওয়ায় আমরা আনন্দিত। বন্দরে যে কনটেইনার জট তৈরি হয়েছে, তা নিরসনে আমরা কাস্টমসের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছি। ইয়ার্ড ব্যবস্থাপনা এবং কনটেইনার স্থানান্তরের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
তবে কর্মবিরতি নিয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ সমাধান হয়নি বলে জানান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের মুখপাত্র ও উপ-কমিশনার সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, আজকে আমরা পুরোদমে কাছ করছি। গতকাল (১৯ মে) কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। কিন্তু এটি নিয়ে কোনো সমাধান আসেনি। আজকে (২০ মে) সন্ধ্যায় অর্থ উপদেষ্টা স্যারের সঙ্গে মিটিং আছে। মিটিংয়ের পরেই কর্মবিরতি আবার শুরু হবে কিনা তা জানা যাবে।’

আরও পড়ুন