অনলাইন ডেস্ক: ‘ইনকিলাব মঞ্চ’র মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রকাশ্যে করার দাবি জানিয়েছেন তার বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক। তিনি বলেন, আমার ভাই শরিফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে আমরা দেখতে পারি।শনিবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা আড়াইটায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির জানাজার আগে তিনি এই দাবি জানান। জানাজার ইমামতি করেন হাদির বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিক নিজেই।আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আজ লক্ষ লক্ষ তৌহিদি জনতা হাজির হয়েছেন ওসমান হাদির জানাজার নামাজে অংশ নিতে। তিনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি বার্তা দিয়ে গেছেন। হাদির একটি সন্তান রয়েছে, যার বয়স মাত্র আট মাস। সন্তান জন্মের পর সে আমাকে বলেছিল, এমন একটি নাম রাখতে, যার মধ্যে বিপ্লবী চেতনা ও সাহসিকতার পরিচয় থাকবে।অনেক যাচাই-বাছাই করে আমি তার সন্তানের নাম রাখি ‘ফিরনাস’একটি বিপ্লবী ও সাহসী নাম।তিনি আরও বলেন, আজ তার সন্তানের চেহারার দিকে তাকানো যায় না। আজ আমার মা পাগলপ্রায়। আমরা ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিল শরিফ ওসমান হাদি।আজ তার লাশ আমার কাঁধে।

আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আজ আপনাদের কাছে আমার একটাই দাবি। রাজধানী ঢাকায় প্রকাশ্যে জুমার নামাজের পর খুনিরা গুলি করে পালিয়ে যায়-সাত থেকে আট দিন পেরিয়ে গেলেও যদি তারা পার পেয়ে যায়, এর চেয়ে লজ্জার কিছু জাতির জন্য আর হতে পারে না। যদি তারা পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার মধ্যে সীমান্ত পেরিয়ে যেতে পারে, তাহলে তারা কীভাবে গেল-এই প্রশ্ন জাতির কাছে রেখে গেলাম। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।
তিনি বলেন, আমার ভাই ওসমান হাদি শহীদ হয়েছে। শহীদ হওয়ার আকাঙ্ক্ষা সে সব সময়ই প্রকাশ করত। আপনারা তার বক্তব্য শুনেছেন। হয়তো আল্লাহ তাআলা তাকে সেই শহীদি মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু এই ঋণ আমি কখনো ছাড়ব না। আমার ভাই শরিফ ওসমান হাদির বিচার যেন প্রকাশ্যে এই বাংলার জমিনে আমরা দেখতে পারি। সাত দিন হয়ে গেল, এখনো আমরা কিছুই করতে পারিনি-এই দুঃখে কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ওসমান হাদির জন্য দোয়া করি, তার স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করি। তার সন্তান যখন বাবাকে দেখার জন্য কোলে আনা হয়, তখন মনে হয়-সে আর কোনো দিন জানবে না তার বাবা কেমন ছিলেন। ওসমান হাদি আর ফিরে আসবে না। ওসমান, তুমি দেখে যাও-লক্ষ লক্ষ জনতা আজ তোমার জন্য পাগল। তুমি আমাদের সবাইকে পাগল বানিয়ে দিয়ে গেছ।
আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি-আল্লাহ যেন আমার ভাই শহীদ ওসমান হাদিকে জান্নাতুল ফেরদৌসের মেহমান হিসেবে কবুল করেন। আমরা যারা বেঁচে আছি, তারা যেন ঈমান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে তৌহীদের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি-সেই তৌফিক আল্লাহ তাআলা আমাদের দান করুন।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের সবার কাছে দোয়া চাই। আমার মেজ ভাই ওমর ফারুক ঘটনাস্থলে ছিল-তার জন্য দোয়া করবেন। আমার ছোট বোন মাসুমা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে, চিকিৎসকরা বলেছেন অবস্থা গুরুতর। আমাদের পরিবারের জন্য দোয়া করবেন। আমাদের আর কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। শরিফ ওসমান হাদি, তুমি বেঁচে থাকো মানুষের হৃদয়ে। আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম নসিব করুন।





