অনলাইন ডেস্ক : চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগকালে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে শীর্ষ সন্ত্রাসী সরোয়ার বাবলাকে। আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধের জেরে এর আগেও তাকে হত্যাচেষ্টা হয়েছে। এমনকি নিয়মিত তিনি ফোনে হত্যার হুমক পেতেন বলে জানিয়েছেন তার ভাই।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সরোয়ারের ভাই আজিজ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমার ভাইকে মেরে ফেলার জন্য হুমকি দিয়ে আসছে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের লোকজন। সপ্তাহ পার না হতে ফোন করে বলা হতো- যা খাওয়ার খেয়ে নে। এজন্য আমরা একটু সতর্ক ছিলাম। কিন্তু এরশাদ উল্লাহর জনসংযোগে নিরাপত্তা থাকবে, সে আশায় আমার ভাইসহ আমরা অংশ নিয়েছিলাম।আজিজ হোসেন দাবি করেন, সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের সহযোগী মো. রায়হানসহ কয়েকজন সরাসরি এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন।বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে বায়েজিদ থানার চালিতাতলীতে গণসংযোগকালে হত্যার শিকার হন সরোয়ার। এসময় এরশাদ উল্লাহসহ আরও কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হন।
চট্টগ্রামজুড়ে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসীদের নামের তালিকায় ওপরের দিকেই ছিল সরোয়ার হোসেন বাবলার নাম। বিএনপির কোনো কমিটিতে নাম না থাকলেও বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরী, আবু সুফিয়ান, এরশাদ উল্লাহসহ অনেকের সঙ্গে তার সখ্য ছিল। তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিতে দেখা গেছে সরোয়ারকে। বিএনপির মিছিল ও সমাবেশে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি এসব নেতার বাসায়ও যাতায়াত ছিল তার।
এমনকি কিছুদিন আগে তার বিয়েতে বিএনপির অনেক কেন্দ্রীয় নেতাকে উপস্থিতির ভিডিও দেখা গেছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, দক্ষিণ জেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ানসহ অনেক নেতাকর্মী বিয়েতে অংশ নেন।
জানা গেছে, এর আগেও হত্যাচেষ্টার শিকার হয়েছিলেন সরোয়ার। গত ৩০ মার্চ নগরের বাকলিয়া অ্যাকসেস রোড এলাকায় একটি প্রাইভেটকারে গুলি চালিয়ে সরোয়ারকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। সে সময় প্রাইভেটকারে থাকা দুজন ঘটনাস্থলে মারা যান। সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান সরোয়ার। পরে এ মামলায় গ্রেফতার আসামিরা জবানবন্দিতে জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে ‘সন্ত্রাসী’ সাজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের নির্দেশে সরোয়ারকে গুলি করা হয়।
জানা যায়, পাঁচটি খুনসহ অন্তত ১৫ মামলার আসামি সরোয়ার হোসেন বাবলা। ২০১১ সালে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে তিনি চট্টগ্রাম কারাগারে ছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান সরোয়ার।
কারামুক্তির পর থেকে সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে বাবলাও চাঁদাবাজি, বালুমহাল ও এলাকা দখল নিয়ে খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়েন। সরোয়ারের বিরুদ্ধে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে নগরীর বায়েজিদ থানা, পাঁচলাইশ থানা, চান্দগাঁও থানা এবং ডবলমুরিং থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে। ছোট সাজ্জাদ বিদেশে পলাতক শিবির ক্যাডার হিসেবে পরিচিত সাজ্জাদ আলীর অনুসারী। একসময় সরোয়ার হোসেনও তার অনুসারী ছিলেন। ২০১৫ সালের পর থেকে সরোয়ার তাদের কাছ থেকে সরে যান। সরে গিয়ে সে নিজে একটা বাহিনী পরিচালনা করে আসছিলেন।
এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের বলেন, এ হত্যাকাণ্ড যারা করতে পারে, তাদের ব্যাপারে পুলিশের অনুমান আছে। অপরাধীদের মূল টার্গেট ছিল সরোয়ার, এরশাদ উল্লাহ নয়। এ ঘটনার মূল কুশীলবদের অনেকেই জেলে আছে। অপরাধীদের শীর্ষ একজন জেলে স্ত্রীসহ আছে। তারা রিমোট (প্রত্যন্ত) এলাকায় পালিয়ে থাকে। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। কিলিং মিশনে যারা ছিল, তাদের শনাক্ত করার মতো কিছু আলামত পাওয়া গেছে। অপরাধীদের দ্রুত শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনের আগে চট্টগ্রামে এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অ্যালার্মিং (উদ্বেগজনক)। আমি বলবো, সামনে বিএনপি–জামায়াতসহ যে কোনো দল জনসভা কিংবা গণসংযোগ করার ২৪ ঘণ্টা আগে পুলিশকে জানাতে। পুলিশ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেবে। এরশাদ উল্লাহ বিকেলে গণসংযোগের আগে আমার কার্যালয়ে ছিলেন। তিনি আমাকে একবারও বলেননি চালিতাতলীতে গণসংযোগ করবেন। এমনকি বায়েজিদ থানা পুলিশও কিছু জানে না।





