অনলাইন ডেস্ক : ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো শহরে পুলিশের সংঘাতপূর্ণ মাদকবিরোধী অভিযানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৩২ জনে দাঁড়িয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। গত মঙ্গলবার রিও ডি জেনেইরোর উত্তরে আলেমাও এবং পেনার ফাভেলাস এলাকায় পুলিশ অভিযানের পর লাশের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।গতকাল বুধবার ভোরে শোকাহত বাসিন্দারা একটি চত্বরে কয়েক ডজন মৃতদেহ রেখে দেন। এর পরই দরিদ্রদের আইনি সহায়তা প্রদানকারী পাবলিক ডিফেন্ডারের কার্যালয় নতুন করে নিহতের সংখ্যা প্রকাশ করে।রাজ্য পুলিশ জানিয়েছে, একটি প্রধান মাদকচক্রকে লক্ষ্য করে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে করা হয়েছিল এবং সন্দেহভাজনদের একটি বনভূমিতে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যেখানে একটি বিশেষ অভিযান ইউনিট ওঁৎ পেতে বসেছিল। রিওর পেনহা পাড়ার বাসিন্দারা রাতভর আশপাশের জঙ্গল থেকে কয়েক ডজন মৃতদেহ জড়ো করেন এবং ৭০টিরও বেশি মৃতদেহ একটি প্রধান রাস্তার মাঝখানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেন।নিহতদের একজনের মা বলেন, ‘আমি শুধু আমার ছেলেকে এখান থেকে বের করে কবর দিতে চাই।’ মৃতদেহের দীর্ঘ সারির দুপাশে শোকাহত মানুষদের কাঁদতে দেখা যায়। লাশগুলো চাদর বা ব্যাগ দিয়ে ঢাকা ছিল।
শহরে পুলিশের এই অভিযানটি ছিল সবচেয়ে মারাত্মক। কর্তৃপক্ষ গত কয়েক দশক ধরে শহরের বিভিন্ন দরিদ্র এলাকা নিয়ন্ত্রণকারী গ্যাংগুলোকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে আসছে।পাবলিক ডিফেন্ডার অফিসের দেওয়া পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানতে চাইলে রিও রাজ্যের গভর্নর ক্লৌদিও কাস্ত্রো জানান, ফরেনসিক কাজ এখনও চলছে। তাকে যে সরকারি পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছিল সেখানে নিহতের সংখ্যা ছিল ৫৮ জন। এই ফরেনসিক কাজ শেষ হলে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়বে।মৃতের সংখ্যা নিয়ে ব্রাজিলের রাষ্ট্রপতি লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা হতবাক হয়ে পড়েন। ব্রাজিলের বিচারমন্ত্রীর জানান, ফেডারেল সরকারকে আগে থেকে না জানানোয় লুলা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হওয়ার আগেই জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলেছিল, ‘পুলিশি অভিযানটি ভয়াবহ।’ গতকাল বুধবার ভোরে বাসিন্দারা নিহতদের মৃতদেহ পেনার একটি চত্বরে নিয়ে যান। যেখানে তারা অভিযানের ভয়াবহ প্রকৃতি দেখানোর জন্য একে অপরের পাশে দীর্ঘ লাইনে রেখেছিলেন।ব্রাজিলের গণমাধ্যমে বলা হয়, অনেক মৃতদেহ কাছের পাহাড়ের ঢাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ বলেছে, সেখানে বেশিরভাগ জায়গায় মারাত্মক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
নিহতদের ‘অপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন গভর্নর কাস্ত্রো। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, সংঘর্ষটি কোনো জনবসতিপূর্ণ এলাকায় হয়নি, সবকিছু ঘটেছে জঙ্গলের ভেতর। তাই আমি বিশ্বাস করি না যে, সংঘর্ষের দিনে কেউ স্রেফ জঙ্গলের মধ্যে হাঁটতে গিয়েছিল। আর সেই কারণেই আমরা তাদের সহজেই শ্রেণিবদ্ধ করতে পারি।’
মঙ্গলবারের দৃশ্যপটকে বাসিন্দারা ‘যুদ্ধের মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন। পুলিশ কর্মকর্তা ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। ব্যারিকেড তৈরির জন্য বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশের মতে, রেড কমান্ডের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এলাকাগুলোতে অভিযান চালানোর সময় গ্যাং সদস্যরা ড্রোন ব্যবহার করে পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর বিস্ফোরক ফেলেছিল।গভর্নর কাস্ত্রো বলেন, ‘রিও পুলিশের সঙ্গে অপরাধীরা ড্রোনের মাধ্যমে বোমা ফেলে। এটিই আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেয়। এটি সাধারণ অপরাধ নয়, বরং মাদক-সন্ত্রাসবাদ।’গভর্নর কাস্ত্রো বলেন, ‘অভিযানটি দুই মাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল এবং এটি একটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের ভিত্তিতে করা হয়েছিল।’গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রেড কমান্ডের একজন শীর্ষস্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তিও রয়েছেন। অভিযানে নিহত চার পুলিশ কর্মকর্তার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন গভর্নর। তিনি নিহত কর্মকতাদের প্রশংসা করেন।রিওতে অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহকারী ব্রাজিলিয়ান সাংবাদিক রাফায়েল সোয়ারেস বিবিসি নিউজ ব্রাসিলকে বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেড কমান্ড গ্যাং রিওতে আক্রমণাত্মক ভূমিকা পালন করেছে। তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্যাং ফার্স্ট ক্যাপিটাল কমান্ড (পিসিসি)-এর কাছে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করেছে।সোয়ারেস আরো বলেন, আগামী বছর নির্বাচনের আগে শহরে অপরাধ দমনে গভর্নর কাস্ত্রোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পুলিশি অভিযান চালানো হয়েছে।সূত্র: বিবিসিব্রাজিলে মাদক চক্রের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী অভিযান, বহু লাশ রাস্তায় সারিবদ্ধ





