২৪শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রেকর্ড জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

ক্রীড়া ডেস্ক : সুপার ওভারে দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতে সিরিজ জমিয়ে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তাতে তিন ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ও শেষটি অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হয়। কিন্তু ‘ফাইনালে’ কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতাই করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশ একপেশে এক ম্যাচই জিতল। ১৭৯ রানের বিশাল জয়ে সিরিজও নিজিদের করে নিয়েছে অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের দল। প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ওয়ানডেতে রেকর্ড সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আগের সর্বোচ্চ ছিল খুলনায় ২০১২ সালে ১৬০ রানের।সবমিলিয়ে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যবধানের জয় বাংলাদেশের।সর্বোচ্চ ১৮৩ রানের জয়টি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ২০২৩ সালে সিলেটে। সেই রেকর্ড ভাঙতে না পারলেও টানা চার ওয়ানডে সিরিজ হারের পর প্রথমবার সিরিজ জিতল বাংলাদেশ। তাতে প্রতিশোধও নিল স্বাগতিকেরা। সর্বশেষ দেখায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘরের মাঠে তিন ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই হয়েছিল বাংলাদেশ।সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচে ২৯৭ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং ধসে পড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের চার স্পিনারের সামনে দাঁড়াতেই পারছিলেন না শাই হোপ-রোস্টন চেসরা। স্পিন ঘূর্ণিতে তাই ১১৭ রানেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবিয়ানরা।শুরু থেকেই উইকেট হারাতে শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নাসুম আহমেদের স্পিনবিষে ৩৫ রান তুলতেই ৩ উইকেট নেই সফরকারীরদের।পরে আর কোনো উইকেট পাননি ম্যাচে যৌথভাবে রিশাদ হোসেনের সঙ্গে ৩ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি পেসার। নাসুমের ধাক্কা শেষ না হতেই তানভীর ইসলাম ও রিশাদ হোসেনরা শুরু করেন। তাতে ৮২ রানে ৮ উইকেট হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ ৫টির মধ্যে তানভীরের ২ উইকেটের বিপরীতে ৩টি নেন রিশাদ। ক্যারিবিয়ানদের শেষ ২ উইকেট নেন অধিনায়ক মিরাজ। একমাত্র পেসার হিসেবে মুস্তাফিজুর রহমান খেললেও একটিও বল করেননি তিনি।
আজকের ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন রিশাদ। তিন ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি এখন তিনি। ১২ উইকেট নিয়ে পেছনে ফেলেছেন আরাফাত সানির ১০ উইকেট নেওয়ার কীর্তিকে। ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই কীর্তি গড়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার। স্পিন-পেসার মিলিয়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। লেগস্পিনার রিশাদের মতোই ১২ উইকেট নেওয়ার কীর্তি রয়েছে সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। আর ১৩ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন মুস্তাফিজ।
এর আগে সাইফ হাসান ও সৌম্য সরকারের জোড়া ফিফটিতে ৮ ‍উইকেটে ২৯৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। লক্ষ্য অবশ্য আরো বড় হওয়ার কথা ছিল। কেননা উদ্বোধনী জুটিতে রেকর্ড ১৭৬ রান তোলেন সৌম্য-সাইফ। মিরপুরে বাংলাদেশের ওপেনিং জুটির যা সর্বোচ্চ। আগের সর্বোচ্চ ছিল ১৫০। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ইমরুল কায়েস ও এনামুল হক বিজয়। প্রতিপক্ষের বিপক্ষেও ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড হয়েছে। আগের জুটিতেও সৌম্য ছিলেন।
সবমিলিয়ে ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি। ২০২০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৯২ রানের জুটি গড়েন তামিম ও লিটন দাস। আজ সুযোগ ছিল দ্বিতীয়বারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে ২০০ রান করার। তবে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সাইফ ৮০ রানে আউট হওয়ায় তা আর হয়নি। ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে ফিফটির ইনিংসটি সমান ৬ ছক্কা ও চারে সাজিয়েছেন তিনি।
সাইফের মতো আক্ষেপ নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন সৌম্যও। কেননা তারও তিন অঙ্ক স্পর্শ করা হয়নি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ক্যারিয়ারসেরা ১৬৯ রানের ইনিংস খেলার পর আজ চতুর্থ শতক পাওয়ার খুব কাছাকাছি ছিলেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু আকিল হোসেনের বলে তিনিও ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ধরা পড়েন। এতে ৭ চার ও ৪ ছক্কায় ৯১ রানের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয় তাকে।
দুই ওপেনারের রানের চাকা পরে সচল রাখতে পারেননি বাংলাদেশের অন্য ব্যাটাররা। কেননা সৌম্য যখন ফেরেন তখন দলীয় স্কোর ২৮.১ ওভারে ২ উইকেটে ১৮১ রান। কিন্তু ইনিংসে বাংলাদেশের স্কোর তিন শও হয়নি। ৮ উইকেটে ২৯৬ রানে থেমেছে। এই সংগ্রহটাও হতো না যদি নুরুল হাসান সোহান (১৬*) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (১৭) দুটি পনেরোউর্ধ্বো ইনিংস না খেলতেন। মাঝে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
মাঝে ৮ রানের ব্যবধানে ৪ উইকেট হারানোয় এই শঙ্কা দেখা দিয়েছিল। সেই যা-ই হোক শুরুর মতো শেষটা করতে পারেনি বাংলাদেশ। শেষ ১৩১ বলে মাত্র ১১৫ রান নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন আকিল হোসেন। ৯১ রানের ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন সৌম্য। আর ৬৮ রানের সঙ্গে ১২ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হয়েছেন রিশাদ।

 

আরও পড়ুন