নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বন্দরে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত শত শত কন্টেনারের নানা পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে। নানা গোঁজামিল ধরা পড়ার পর বহু আমদানিকারক গা ঢাকা দেয়া, একাধিক মামলার কারণে এসব পণ্য সময়মতো খালাস না করায় ইতোমধ্যে শত শত কন্টেনারের নানা পণ্য নষ্ট হয়ে গেছে।অনেক কন্টেনারের পণ্য জনস্বাস্থ্যসহ বন্দরের জন্য হুমকি হয়ে রয়েছে। অন্যদিকে এসব পণ্যভর্তি কন্টেইনারগুলো বন্দরের ইয়ার্ড দখল করে রেখেছে। এসব পণ্য বোঝাই কন্টেনারের সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি বলে সূত্রে নিশ্চিত করেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলেছে, ইয়ার্ডে কন্টেনার কম হলে ইকুইপমেন্ট মুভমেন্টসহ কাজে সুবিধা হয়। এতে বন্দরের উৎপাদনশীলতা বেড়ে যায়। বাড়তি কন্টেনার বন্দরের কাজের গতি ঠেকিয়ে দেয়। বন্দরের বছরের পর বছর আটকে থাকা ১০ হাজারের বেশি কন্টেনার কাজে-কর্মে সংকট তৈরি করে আসছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম কাস্টমসকে দফায় দফায় চিঠি দিলেও কার্যত কিছু হয়নি। হাতে গোনা কয়েক কন্টেনার পণ্য সরিয়ে এবং মাটিতে পুঁতে ফেলা হলেও বেশিরভাগ কন্টেনার ইয়ার্ড দখল করে রয়েছে।
এদিকে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আমদানিকারকদের জটিলতা, প্রশাসনিক জট ও চলমান মামলার কারণে এসব পণ্য খালাস করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে শিপিং লাইনগুলো কন্টেনার ফেরত পাচ্ছে না, আমদানিকারকরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন এবং সরকারের রাজস্ব আদায়েও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
এরই প্রেক্ষিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত মে মাসে বিশেষ আদেশ জারি করে। উক্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দশ বছরে আটকা পড়া কন্টেনারগুলো দ্রুত নিলাম বা ধ্বংস করতে হবে। প্রথম নিলামে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে বিক্রির সুযোগ রাখা হয়েছে। দুই দফা নিলামেও বিক্রি না হলে ব্যাপক প্রচারণার মাধ্যমে সর্বোচ্চ প্রস্তাবে বিক্রি করার নির্দেশনা রয়েছে। আর ব্যবহার অযোগ্য বা নিষিদ্ধ পণ্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে হস্তান্তরের সুযোগও রাখা হয়েছে।
এ নির্দেশনার পর চট্টগ্রাম কাস্টমস কিছু কন্টেনার নিলাম করেছে উল্লেখ করে কাস্টমসের একজন কর্মকর্তা জানান, এভাবে দু-চারশ কন্টেনার নিলাম করে কিছুই হবে না। ইয়ার্ডে বছরের পর বছর আটকে থাকা কন্টেনারগুলোর ব্যাপারে সরকারকে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম হাতে নিতে হবে। এখন দলীয় সরকার নেই। এ সুযোগে আটকে পড়া কন্টেনারগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আমদানিকৃত বহু পণ্য আমদানিকারকরা খালাস করেন না কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে। নানা গোঁজামিল ধরা পড়ার পর বহু আমদানিকারক গা ঢাকা দেন। অনেক সময় আমদানিকৃত পণ্যের বাজারদর কমে গেলে সটকে পড়েন অনেকে। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে আনা পণ্যের চালান ধরা পড়লেও খালাসে জটিলতা তৈরি হয়। আরো নানা আইনি জটিলতায় বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য বোঝাই অনেক কন্টেনার আটকা পড়ে রয়েছে।
কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা চাইলেই একটি কন্টেনার ধ্বংস করতে পারি না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন নিতে হয়। সমন্বয় করতে হয় পরিবেশ, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন সংস্থার সাথে। এছাড়া কোনো চালানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা থাকলেও কাস্টমস বা এনবিআর সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। নানা প্রতিকূলতায় সৃষ্ট দীর্ঘসূত্রতার কারণে আমদানিকৃত নিলামযোগ্য বহু পণ্য নষ্ট হয়ে যায়। পচনশীল নানা পণ্য পচে বন্দরের অভ্যন্তরে দুর্গন্ধ ছড়ানোর মতো ঘটনাও ঘটে বলে তিনি জানান।
