১৭ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণের যাত্রা শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে সরাসরি জ্বালানি তেল পরিবহণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন (কমিশনিং) হয়েছে।
শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গার গুপ্তখালে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে প্রকল্পের উদ্বোধন করেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রায় ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়। এতে খরচ বেড়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন এবং গোদনাইল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ৮ দশমিক ২৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়। সব মিলিয়ে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইন গেছে দেশের ২২টি নদী ও খালের মধ্য দিয়েছ। এজন্য মোট ৯টি স্টেশন তৈরি হয়েছে, যার জন্য ২৮৬ দশমিক ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পরিবহণ সহজ করার জন্য কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার মোগবাড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় ডিপো তৈরি করা হয়। এছাড়া নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার বসানো হয়।
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনটির বার্ষিক পরিবহণ ক্ষমতা ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন থেকে ৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন। ভবিষ্যতে পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিকটন পর্যন্ত পরিবহণ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন তেল পরিবহনের সক্ষমতা আছে এ পাইপলাইনের।
আগে তেলবাহী ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে জ্বালানির বড় অংশ পরিবহণ করা হতো। এতে প্রতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলপথে জ্বালানি পরিবহণের জন্য ১১০ টিরও বেশি জাহাজের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহণে বিপিসির বার্ষিক খরচ প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাইপলাইন চালু হওয়ার পর খরচ নেমে আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়। এতে বছরে অন্তত ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এ ছাড়া সিস্টেম লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও খরচ সাশ্রয় হবে। আগে চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত তেল নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন সেটা ১২ ঘণ্টায় নেমে আসবে।পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণ মনিটরিংয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখান থেকে তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে বিপিসি কর্মকর্তারা জানান।

আরও পড়ুন