১৫ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পাইপলাইনে তেল যাবে ঢাকায়, সময় বাঁচবে ৩৬ ঘণ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের জ্বালানি পরিবহণ খাতে নতুন যুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। সফল প্রাক-কমিশনিংয়ের পর প্রস্তুত হয়েছে পাইপলাইন, যার মাধ্যমে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সরাসরি যাবে জ্বালানি তেল। ফলে আগে ঢাকায় জ্বালানি পরিবহণে প্রায় ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতো, সেখানে পাইপলাইনে এখন সেটা মাত্র ১২ ঘণ্টায় নেমে আসবে। এতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে খরচ সাশ্রয় হবে।
কাল শনিবার (১৬ আগস্ট) সকালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান চট্টগ্রামের গুপ্তাখালে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ডেসপাস টার্মিনালে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন। এতে জ্বালানি সচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ডিভিশনের প্রধান মেজর জেনারেল মুহাম্মদ হাসান–উজ–জামান উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ২০১৮ সালের অক্টোবরে প্রায় ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকার প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের মার্চে শেষ হয়েছে। এতে খরচ বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা।
প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল পর্যন্ত ১৬ ইঞ্চি ব্যাসের ২৪১ দশমিক ২৮ কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইন এবং গোদনাইল থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা পর্যন্ত ১০ ইঞ্চি ব্যাসের ৮ দশমিক ২৯০ কিলোমিটার পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পাইপলাইন গেছে দেশের ২২টি নদী ও খালের মধ্য দিয়েছ। এজন্য মোট নয়টি স্টেশন তৈরি হয়েছে, যার জন্য ২৮৬ দশমিক ৮৮ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
চট্টগ্রাম থেকে ফেনী, কুমিল্লা, চাঁদপুর এবং মুন্সীগঞ্জ হয়ে ঢাকায় পরিবহণ সহজ করার জন্য কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলার মোগবাড়িতে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক এবং স্বয়ংক্রিয় ডিপো তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের এবং ফতুল্লায় যমুনা অয়েল ও মেঘনা পেট্রোলিয়ামের রিজার্ভার বসানো হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক পেট্রোলিয়াম ট্রান্সমিশন কোম্পানির প্রকৌশলী মো. আমিনুল হক বলেন, ‘আমাদের পাইপলাইন, ডিপো, রিজার্ভার সব প্রস্তুত করা হয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমরা নতুন স্থাপিত পাইপলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি পরিবহণ করেছি। কোনো ধরনের সিস্টেম লস ছাড়াই প্রায় পাঁচ কোটি লিটার ডিজেল আমরা পরিবহণ করেছি। পাইপলাইনে কিছু কারিগরি ত্রুটি ছিল, সেগুলো সমাধান করা হয়েছে।’
বিপিসির কর্মকর্তারা জানান, পাইপলাইনটির বার্ষিক পরিবহণ ক্ষমতা ২ দশমিক ৭ মিলিয়ন থেকে ৩ মিলিয়ন মেট্রিকটন। ভবিষ্যতে পাঁচ মিলিয়ন মেট্রিকটন পর্যন্ত পরিবহন ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব। প্রতি ঘণ্টায় ৩৫০ মেট্রিকটন তেল পরিবহনের সক্ষমতা আছে এ পাইপলাইনের।
আগে তেলবাহী ট্যাংকারের মাধ্যমে নৌপথে জ্বালানির বড় অংশ পরিবহণ করা হতো। এতে প্রতি মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে জলপথে জ্বালানি পরিবহনের জন্য ১১০ টিরও বেশি জাহাজের প্রয়োজন হয়। আর পরিবহণে বিপিসির বার্ষিক খরচ প্রায় ৩২৬ কোটি টাকা। কিন্তু পাইপলাইন চালু হওয়ার পর খরচ নেমে আসবে মাত্র ৯০ কোটি টাকায়। এতে বছরে অন্তত ২২৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। এছাড়া সিস্টেম লস এবং চুরি ঠেকানোর মাধ্যমেও খরচ সাশ্রয় হবে।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘রিজার্ভার থেকে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ডিপোতে জ্বালানি তেল সহজে পাঠাতে পারব। আগে আমাদের চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত তেল নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন সেটা ১২ ঘণ্টায় নেমে আসবে।’
এদিকে পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহণ মনিটরিংয়ে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেখান থেকে তেল সরবরাহের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে বিপিসি কর্মকর্তারা জানান।

আরও পড়ুন