৩১শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

পিন্ডি ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয় : নাহিদ ইসলাম

অনলাইন ডেস্ক: জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘আমরা পিন্ডি ভেঙেছি দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। মওলানা ভাসানী পাকিস্তানের শাসকদের বিরুদ্ধে যেমন লড়েছেন, তেমনি দিল্লির আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন। এই টাঙ্গাইলেই মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে বহু ঐতিহাসিক আন্দোলনের সূচনা হয়েছে।’মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুরে টাঙ্গাইল শহরের নিরালা মোড়ে এনসিপি আয়োজিত জুলাই পদযাত্রার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ভাসানী শুধু বাংলাদেশের নয়, উপমহাদেশের অনন্য এক রাজনৈতিক প্রবাদপুরুষ। আসামের বাঙালি মুসলমান কৃষকদের জমির অধিকার আদায়ে তার সংগ্রাম আজও প্রাসঙ্গিক। তিনি ছিলেন গণমানুষের নেতা, তৃণমূল রাজনীতির পথিকৃৎ। ভাসানীই প্রথম বুঝেছিলেন পাকিস্তানের সঙ্গে এক ছাদের নিচে বাঙালির টিকে থাকা অসম্ভব।কাগমারী সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি পাকিস্তানি শাসকদের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়েছিলেন।’
ভাসানীর অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘তাকে ইতিহাসে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা হয়নি। শেরেবাংলা ফজলুল হক এবং মওলানা ভাসানীর মতো নেতাদের বাদ দিয়ে ইতিহাসের বিকৃতি করা হয়েছে। অথচ শেখ মুজিবুর রহমানও ভাসানীর রাজনৈতিক ধারার উত্তরসূরি।
১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থানের অন্যতম নেপথ্য কারিগর ছিলেন মওলানা ভাসানী। আমরা তার আদর্শ বুকে ধারণ করে জাতীয় নাগরিক পার্টিকে দেশের সামনে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে চাই।’এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, ‘গত কয়েক দিন ধরে রংপুরের একটি উপজেলায় হিন্দুদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমাদের নবীজিকে (সা.) সেখানে কটূক্তি করা হয়েছে।আমরা এর অবশ্যই বিচার চাই। কিন্তু সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সভ্যতার ওপর কেউ আঘাত করে—এমন ঘটনা আমরা কখনোই মেনে নেব না। আমরা ধর্মীয় সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন কোনো শক্তিশালী কৃষক সংগঠন নেই। ফলে কৃষকদের কথা বলার কোনো প্ল্যাটফরম নেই। কৃষকরা তাদের ন্যায্য অধিকার পান না। কৃষকরা সরকারের ভর্তুকি পান না। আবার শস্য বিক্রি করতে গেলে দাম পান না। আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই, যেখানে কৃষক তাদের ন্যায্য অধিকার পাবেন।’
টাঙ্গাইল শাড়ি সম্পর্কে নাহিদ বলেন, ‘টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই পণ্য নিয়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’ নামে কিভাবে ভারতের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারে। টাঙ্গাইল শাড়ির জিআই স্বত্ব কখনোই ভারত নিতে পারে না। অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা তাতশিল্পের পুনরুদ্ধার চাই।’
পথসভায় উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে প্রশাসন, পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে বাংলাদেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য দেখতে চাই। আমরা কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর জন্য প্রশাসনকে আর ব্যবহৃত হতে দেখতে চাই না। আগামীর বাংলাদেশে কোনো মিডিয়াকেও কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠী বা দলের দালাল হিসেবে দেখতে চাই না।’ এ সময় তিনি দেশে কোনো চাঁদাবাজিও দেখতে চান না বলে জানান।

উত্তরাঞ্চলের সংগঠক আজাদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, সিনিয়র সদস্যসচিব সারোয়ার নিভা, ডা. তাজনুভা জাবিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন