১৮ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ঢাকায় বসে ‘১০ জন লোক’ জনগণের ভাগ্য ঠিক করতে পারবে না: খসরু

অনলাইন ডেস্ক: জনগণের ‘ম্যান্ডেট ছাড়া’ কোনো পরিবর্তনই ‘টেকসই’ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।আর ‘১০ জন লোক ঢাকায় বসে’ বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকায় এক আলোচনা সভায় আমীর খসরু বলেন, “আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো পরিবর্তন টেকসই হবে না, যদি জনগণের ম্যান্ডেট না থাকে। আমরা বহু আগে বহু কিছু করেছি কোনোটাই টিকে নাই।“জনগণের মাধ্যমে যেটা পরিবর্তন হবে, সেটাই একমাত্র পরিবর্তন।”
অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ টেনে আমীর খসরু বলেন, “যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, আপনারা যদি সেসব দেশের দিকে ফিরে তাকান দেখবেন, যারা যত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে গেছে, সেই দেশগুলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পেরেছে।“আর যেসব দেশ নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব করে নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে যত বেশি পিছিয়েছে, সেই সব দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসে নাই… আমি লম্বা তালিকা আপনাকে দিতে পারি। এটা মাথায় রাখতে হবে।”
জনগণকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব নয় মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা বলেন, “এজন্য যে জায়গাগুলোতে আমরা ঐক্যমত্য পৌঁছবো তার বাইরে এটাকে নিয়ে যদি আমরা সময় নষ্ট করি, তাহলে কিন্তু ওইসব দেশের পরিণতি আমাদের ভোগ করতে হবে।”রাষ্ট্র সংস্কার উদ্যোগ তিনি বলেন, “আমার কাছে যেটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা অন্য দলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে। আপনি ১০ বছর যদি ঐক্যমত্য কমিশনের আলোচনা চালান তাহলে হবে না তো।”
গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হলে সংস্কারের ম্যান্ডেট জনগণের কাছ থেকে নিতে হবে মন্তব্য করেন আমীর খসরু বলেন, “আর কিছু, ১০ জন লোক ঢাকায় বসে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারবে না।”
‘তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসেনি’
জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি আয়োজিত আলোচনা সভায় আমীর খসরু বলেন, “গোপালগঞ্জের এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।“একই সঙ্গে আমাদের অনুধাবন করতে হবে, যে দলটি এই কাজটি করেছে এটা তাদের রাজনীতির শুরু থেকে, এই কাজটা শুরু করেছে। এই দলটি জন্ম নেওয়া থেকে আজ অবধি ওদের কোনো পরিবর্তন হয় নাই।“ওদের (আওয়ামী লীগ) রাজনীতি হচ্ছে পেশী শক্তি দেখানো, সরাসরি পেশীশক্তির রাজনীতি। তার মাধ্যমে তারা মনে করে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে।”সেখানে থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা আওয়ামী লীগের ডিএনএ এর মধ্যে আছে। গোপালগঞ্জে যেটা দেখেছি, সবাই বলেছেন, এত কিছুর পরও, একটা পলাতক শক্তির রাজনীতি জনগণ দ্বারা প্রত্যাখাত হয়েছে, তাদের মধ্যে পরিবর্তন আসে নাই।”
‘গোপালগঞ্জে কেন এই মৃত্যৃ’
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির পদযাত্রা ও সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে হামলা, সংঘর্ষ ও চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না।তিনি বলেন, “গোপালগঞ্জে যেটা হল, আমি স্তম্ভিত হয়ে গেলাম সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে? নাকি ওরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চারটা মরুক, তারপরে আমরা কিছু করব। পরে বিরাট একটা বিবৃতি দিয়েছেন…কাউকে ক্ষমা হবে না।”এ বিবৃতি কোনো কাজে আসবে? এ প্রশ্ন করে তিনি বলেন, “চারজন মানুষ তো মারা গেছে…গোপালগঞ্জের মানুষ কোন দল করে, কোনো পত্রিকায় লেখে নাই… ধরে নেই তারা যে দলেরই হোক তার মৃত্যু তো আমি কামনা করি না।“আমি চাই, একটা শান্তিপূর্ণ দেশ। সেই রকম দেশ বানাতে হলে সরকারের দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।”


‘গোপালগঞ্জে কেন গেছেন’
গোপালগঞ্জের ঘটনায় এনসিপি নেতাদের বিচক্ষণতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক।তিনি বলেন, “আপনারা জানেন কীভাবে গেছেন, কীভাবে বেরিয়েছেন। কেন গোপালগঞ্জে গিয়ে মুজিববাদকে কবর দিতে হবে, সেই কথা কি সেখানে গিয়ে আপনাদের বলতে হবে?মুজিবাদ বলে কিছু থাকলে সেটা পঁচাত্তরের পরে আওয়ামী লীগ নিজেই কবর দিয়েছে মন্তব্য করে সাইফুল হক বলেন, “তারা এটাকে মু্ছে ফেলেছে…বিশেষ করে, গত ১৫ বছরে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র চালাতে যেয়ে এর যা কিছু অবশিষ্ট ছিল।”বিষয়গুলো একটু বিবেচনার মধ্যে নেওয়া দরকার মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেখানে আমরা যাচ্ছি, সেখানের মাটি, মানুষ, সংবেদনশীলতা, তার মনস্তত্ত্ব, তার জায়গাটা জানা দরকার।“কেন গেছেন গোপালগঞ্জে আমার তরুণ বন্ধুরা? সেখানে মানুষের মন জয় করবেন। কোথায় তাদের মন জয় করতে কথাটা বলবেন, যুক্তি দিয়ে তথ্য দিয়ে কথাটা বলবেন। একই সাথে মানুষের সংবেদনশীলতাকে বিবেচনার মধ্যে নেওয়া দরকার। এগুলো আমাদের সবার জন্য সত্য।”এ ঘটনার ফলাফল নিয়ে সাইফুল হকের প্রশ্ন, “আওয়ামী লীগকে নতুন করে ফিরে আসার জমিন তৈরি করা হচ্ছে কিনা?”
‘পুলিশ দাঁড়িয়ে তামাশা দেখল’
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, “গোপালগঞ্জের ঘটনা পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখল।“আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছিল সেই সংস্কারের কোনো কিছুই আমরা বাস্তবে দেখতে পারছি না। আমরা দেখতে পারছি না পুলিশের কোনো দৃশ্যমান সংস্কার।”দৃশ্যমান সংস্কার ছাড়া বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি বলেন, “ঐকমত্য কমিশনে যে সংস্কার চলছে, সেই কার্য্ক্রমকে যারা বাধাগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন তাদের আমি বলব, আপনারা সংস্কার মেনে নিন, যেসব মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাব হয়েছে সেগুলো আপনারা মেনে নিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করুন।”‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংস্কারের রূপরেখা’ শীর্ষক এই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জেএসডির সহসভাপতি তানিয়া রব।দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপনের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, ভাসানী জনশক্তি পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, এবি পার্টির মজিবুর রহমান মঞ্জু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, গণফোরামের মিজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আহ্বায়ক নঈম জাহাঙ্গীর, জেএসডির সিরাজ মিয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক হেলালুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।

আরও পড়ুন