মোহাম্মদ জাহেদ উল্ল্যাহ চৌধুরী: বাংলাদেশের স্বনামধন্য জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড লিমিটেড তৈরি করছে দুটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন টাগবোট, যা রপ্তানি হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই)। এই টাগবোটগুলো নির্মিত হচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের জন্য।
এ উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বোট ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ বলেন, ওয়েস্টর্ন মেরিন গতবছর রায়ান নামের একটি জাহাজ রপ্তানি করেছে। এবার নতুন দুটি টাগবোট রপ্তানি করছে প্রতিষ্ঠানটি। এই দুটি জাহাজ বিশ্বে মেইড ইন বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করবে। বিশ্বে ৪০০ বিলিয়ন ডলারের মার্কেট হলো শিপ বিল্ডিং। এই বাজারে আমাদের যদি ১% জাহাজ পাঠানো যায় তাহলে অন্তত ২’শ বিলিয়ন ডলার বাংলাদেশ আয় করতে পাবে।
এ সময় কক্সবাজার সীমান্তে মাদকের রুট বন্ধে সরকার কাজ করছে বলে জানান তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাদকের সাপ্লাই রুট কক্সবাজার সীমান্ত এলাকা। ওপারের মানুষ মাদকের অর্থ দিয়ে অনেক কিছু করছে।সেটা আমাদের বন্ধ করতে হবে। আমরা মাদকের উৎস বন্ধ করতে পারব না। কিন্তু মাদকের রুট বন্ধ করতে হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি মাদক রোধ, নির্মূল ও দমনে কাজ করছে। তিন দিন আগে কক্সবাজারে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই সভায় সভাপতিত্ব করেছেন। সব সংস্থার প্রধানরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সর্বোতো শক্তি নিয়োগ করা হবে মাদকের চোরাচালান বন্ধ করার জন্য। সরকারের নীতি জিরো টলারেন্স। আমাদের রিসোর্সের ঘাটতি আছে। কিন্তু যা রিসোর্স আছে তা দিয়ে সরকার মাদকের চোরাচালান বন্ধের চেষ্টা করছে। সরকারের উদ্যোগ, পদক্ষেপ আমি বলব খুবই দৃঢ়। খুবই শক্ত অবস্থান নিয়েছে মাদকবিরোধী অভিযানে। জনগণকে সচেতন হতে হবে। মাদক সেবনের ক্ষতিকর দিক সাংবাদিকদের তুলে ধরতে হবে। অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষকে সচেতন করতে হবে।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী কক্সবাজার-উখিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। প্রথম কথা হলো, তাদের ফেরত পাঠাতে হবে। সরকার সর্বোতোভাবে চেষ্টা করছে যাতে তাদের ফেরত পাঠানো যায়। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে যাতে কোনো অনৈতিক, অসাধু কাজ না হয়। আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখা। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী কাজ করছে। সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা দিচ্ছে। সীমান্ত রক্ষায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ডের চারটি ব্যাটালিয়ন কক্সবাজার এলাকায় নিয়োজিত আছে। বিশেষ ফোকাস আছে আমাদের। চোরাচালান রোধে বিশেষ নজর দিচ্ছে সরকার। নতুন করে রোহিঙ্গা আসা বন্ধ করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমাদের এজেন্সিগুলো কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা শহিদুল বাসারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মো. আশফাক হোসেন, আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জুলকারনাইন, ইউএই টু দ্য অ্যাফেয়ার্সের প্রতিনিধি এবং মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা।বক্তব্য রাখেন মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের পরিচালক আহমেদ আল মারজুকি। ২০০৮ সালে আধুনিক জাহাজ নির্মাণ প্রথা চালু হয়েছে। বর্তমানে আমরা অসংখ্য জাহাজ রপ্তানি করেছি। ২০০ মিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। মাঝখানে এই শিল্পে বিপর্যয় নেমে এসেছিল। সেটি আবার ঘুরে দাড়িয়েছে। নতুন এই জাহাজ দুটি রপ্তানি মেইড ইন বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করবে।
জাহাজ দুটি সম্পর্কে ওয়েস্টার্ন মেরিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন সোহেল হোসেন জানান, ২০২৩ সালে ওয়েস্টার্ন মেরিন সংযুক্ত আরব আমিরাত ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মারওয়ান শিপিং লিমিটেডের সঙ্গে আটটি জাহাজ নির্মাণের চুক্তি করে। এর মধ্যে দুটি টাগবোট, দুটি লজিস্টিক ক্রাফট এবং চারটি ট্যাংকার রয়েছে। এই চুক্তির আওতায় ৬৫ টন বোলার পুল ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি টাগবোট— ‘খালিদ’ ও ‘ঘাযা’ বর্তমানে নির্মাণাধীন এবং চলতি জুলাই মাসেই ইউএইতে রপ্তানি করা হবে। বাকি ৬টি জাহাজ ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে হস্তান্তর করা হবে।
বাংলাদেশের জন্য নির্মিত দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ সম্পর্কে ক্যাপ্টেন হোসেন জানান, বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট করপোরেশন (ইওডঞঈ)-এর অধীনে ‘এমভি সুরমা’ ও ‘এমভি সাপলা’ নামে এই দুটি আধুনিক যাত্রীবাহী জাহাজও নির্মাণাধীন।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সাল থেকে ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড বিদেশে জাহাজ রপ্তানি করে আসছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের ১১টি দেশে মোট ৩৪টি জাহাজ রপ্তানি করেছে।