অনলাইন ডেস্ক: গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। এই ঘটনার প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ।
তবে প্রতিবাদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট এবং ইডেন মহিলা কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ নামে অনুষ্ঠিত মিছিলে উচ্চারিত নানা স্লোগান রাজনৈতিক মহলের দৃষ্টি কেড়েছে। এসব মিছিলের স্লোগানে বিএনপিকে আক্রমণ করা হয়। বিশেষ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে টার্গেট করে স্লোগান দেওয়া হয়- ‘চাঁদা তোলে পল্টনে, ভাগ যায় লন্ডনে’, ‘যুবদল খুন করে, তারেক রহমান কী করে?’
শুক্রবার (১১ জুলাই) রাতে সংগঠিত এসব মিছিলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ ধরনের স্লোগান ছাড়া কিছু অশ্লীল ও অশোভন ভাষার বাক্য উচ্চারণ করতেও দেখা যায়। স্লোগানের এমন ভাষা নিয়ে যেমন একদিকে বিতর্ক এবং সমালোচনা চলছে; অন্যদিকে জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ইতিবাচক ভাবমূর্তি নিয়ে আবির্ভূত তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্তা করতেই এসব মিছিলের আয়োজন কি না, এমন প্রশ্নও উঠেছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও বিশ্লেষণ ও নানা সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাতে বিশেষ দুই-একটি দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওইসব মিছিলে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। সেসব মিছিলেই শোনা যায় এসব আপত্তিকর স্লোগান। ফলে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টরা এসব মিছিল এবং মিছিলে দেওয়া স্লোগানের পেছনে রাজনৈতিক কোনো চক্রান্তের সন্দেহকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না।
৫ আগস্ট আওয়ামী ফ্যাসিবাদের পতনের পর রাজনীতিতে সহনশীলতা ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য দলের প্রতি বারবার নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে তারেক রহমানকে। ওই সময় দেশজুড়ে সন্ত্রাস-চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে এসব অভিযোগে দলের প্রায় দুই হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। সর্বশেষ মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে সোহাগকে হত্যার ঘটনায় জড়ানোয় জাতীয়তাবাদী যুবদল থেকেও পাঁচজনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে।
দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ অথবা কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা চাঁদাবাজির সঙ্গে সম্পৃক্ততার ঘটনায় ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কাউকেই বিন্দুমাত্র ছাড় না দিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই সাংগঠনিক পদক্ষেপ নিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন।
এই পরিস্থিতিতে তার বিরুদ্ধে এমন অশোভন স্লোগান ও অপপ্রচারের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। তারা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবেই দেখছেন। তাদের অভিমত, নিঃসন্দেহেই চক্রান্তকারীরা বিএনপি ও তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করার জন্য টার্গেট করেছে। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপিকে চাপে ফেলার কৌশল হিসেবেও এসব ঘটনাকে দেখছেন বিএনপির নেতারা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে কেউ কেউ ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। নির্বাচন নিয়ে কোনো ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেলেই তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। আর এতে ঘি ঢালছে সারা দেশে ছড়ানো-ছিটানো বিএনপির উচ্ছৃঙ্খল ও ‘দুধের মাছি’ কিছু নেতা-কর্মী। তাদের অতি উৎসাহী কিছু কর্মকাণ্ড বিএনপির বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর পক্ষে রসদ জোগাচ্ছে।
তারা বলছেন, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পতনের পর থেকেই বিএনপিকে ‘চাঁদাবাজ’ রাজনৈতিক দল হিসেবে প্রমাণের প্রচেষ্টা ছিল কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের। বিভিন্ন সময় তাদের দলের নেতাদের বক্তব্যতেও এমন ইঙ্গিত বহুবার পাওয়া গেছে। যেহেতু এখন সবকিছু সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রকাশিত হলেই ভাইরাল হতে সময় লাগে না, তাই বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে জনরোষ তৈরি করারও সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব চক্রান্তের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই দলীয় নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে আসছিলেন। তবু একের পর এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএনপিকে যেভাবে কোণঠাসা করা হচ্ছে, তাতে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করে শনিবার (১২ জুলাই) জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক অনুষ্ঠানে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তারেক রহমান বলেন, ‘ধীরে ধীরে অদৃশ্য শত্রু দৃশ্যমান হচ্ছে। ষড়যন্ত্র এখনো শেষ হয়ে যায়নি। ’
