নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশে কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতি হবে না বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনীতি হবে না। দেশ পরিচালনা হবে প্রত্যেকটি নাগরিকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবং প্রত্যেকটি নাগরিকের পরিচয় হচ্ছে বাংলাদেশি। ধর্ম যার যার; রাষ্ট্র সবার। তাই এ রাষ্ট্রে, সমাজে এবং দেশে বিভক্তির কোনো সুযোগ থাকবে না।’রবিবার (১১ মে) সকালে নগরের বৌদ্ধ মন্দিরস্থ ডিসি হিলের সামনে বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে সম্মিলিত বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে শান্তি শোভাযাত্রা পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
শান্তি শোভাযাত্রায় ৬১টি সংগঠন অংশগ্রহণ করে। শোভাযাত্রাটি বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে থেকে শুরু হয়ে এনায়েত বাজার, জুবলী রোড়, নিউমার্কেট, কোতোয়ালী মোড়, লালদিঘী পাড়, আন্দরকিল্লা, চেরাগি মোড় হয়ে পুনরায় বৌদ্ধ মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়।
উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রাক্তন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রিটন কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সিএমপির উপ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন, আর কে কে বাংলাদেশের ব্রাঞ্চ মিনিষ্টার মি. মরি মাসানোবু, চট্টগ্রাম নগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
এসময় আমীর খসরু বলেন, ‘আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র গড়বো। এখানে বিভক্তির কোনো সুযোগ নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠের রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না। আমরা সবাই মিলে দেশ গড়বো।’তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চিন্তা চেতনা শহীদ রাষ্টপতি জিয়াউর রহমানের এটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য। তিনি বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদকে এনেছেন এজন্যই। এদেশে বসবাসরত সমস্ত মানুষ আমরা বাংলাদেশি। ধর্ম যার যার; রাষ্ট্র সবার— একথাটা পরিষ্কার। আমরা মেসেজ দিতে চাই, এ দেশ সবার। সবাই মিলে গড়তে হবে।’মানুষের মধ্যে রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকতে পারে বলে মন্তব্য করে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘এ শান্তি শোভাযাত্রায় দেশের রাজনীতিতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা থাকতে হবে। অপরের সঙ্গে আমার রাজনৈতিক ভিন্নতা থাকবে, কিন্তু অপরের যেই মত সেটাকে সম্মান জানাতে হবে। ভিন্ন থেকেও আমরা একসঙ্গে চলতে পারবো, সম্মান জানাতে পারবো, কোনো অসুবিধা নেই। সবাইকে সহনশীল হতে হবে। দেশে যেন আরও শান্তিপূর্ণ রুপ নেই। তাই এ দেশের মানুষ একটা স্থিতিশীল বাংলাদেশ চাই। যেখানে সবাই ওঠে আসবে। আজকের শোভাযাত্রা সেটারই প্রতীক হিসেবে মনে করি।’
‘দেশে আর অশান্তি চাই না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বুদ্ধিস্ট কমিউনিটিতে যারা দেশে আছে। তারা কিন্তু চট্টগ্রামেই বেশি বসবাস করেন। তাদের সাথে আমাদের ছোটবেলা থেকে বড় হওয়া। অনেক বন্ধু একসাথে লেখাপড়া করেছি। বৌদ্ধ পূর্ণিমার যে শান্তির বাণী এটা সারা বিশ্বে আছে এবং বাংলাদেশের জন্য বেশি প্রযোজ্য। আমরা বিগত ১০-১৫ বছর অনেক অশান্তির মধ্যে থেকেছি। এত অশান্তির মধ্যে থেকেছি যে এ সমাজ ভেঙে গেছে, রাজনীতি ভেঙে গেছে, দেশ ভেঙে গেছে, ব্যবসা বাণিজ্য সবকিছু আমাদের সমাজকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এমন দেশ সমাজ গড়তে চাই, যেই দেশ হবে শান্তি। আমরা আর অশান্তি চাই না বাংলাদেশে।’
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘চট্টগ্রামকে আমরা ক্লিন, গ্রীন, হেলদি সিটির পাশাপাশি একটি শান্তির শহর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। একইসঙ্গে এটিকে একটি নিরাপদ শহর হিসেবেও গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম কিংবা খ্রিস্টান আমরা সবাই সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘অতীতেও চট্টগ্রামে যখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ভূমিকা রাখতে হয়েছে, আমরা সাহসিকতার সঙ্গে সে দায়িত্ব পালন করেছি। ভবিষ্যতেও সে ঐতিহ্য বজায় রাখবো। ধর্মীয় ভিন্নতার কারণে এই শহরে কেউ বৈষম্যের শিকার হবেন না, সেটি আমরা নিশ্চিত করবো।’
লায়ন রনি কুমার বড়ুয়া ও রোটারিয়ান সপু বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির চেয়ারম্যান অজিত রন্জন বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ও শোভাযাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী রুবেল বড়ুয়া, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি অধ্যাপিকা লায়ন ববি বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সহ-সভাপতি মৃদুল বড়ুয়া চৌধুরী, বিএলআই বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতি অধ্যাপক মৃণাল কান্তি বড়ুয়া, বুদ্ধিস্ট ফেডারেশনের সদস্য অশোক কুমার বড়ুয়া।
উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অরুন কুমার বড়ুয়া দেবু, সাংবাদিক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রফেসর তুষার কান্তি বড়ুয়া, ড. সৌমেন বড়ুয়া, প্রকৌশলী অসীম বড়ুয়া, লায়ন ছোটন বড়ুয়া, সৌমেন বড়ুয়া ডিম্পল, বৌদ্ধ সংগঠন বিডিটি কর্মকর্তা মি. প্রদীপ বড়ুয়া, সন্তু বড়ুয়া, উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান অমরেশ বড়ুয়া চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক সুমন বড়ুয়া বাপ্পী, নারীনেত্রী অধ্যাপিকা শুক্লা বড়ুয়া টিমন, ঝুম্পা বড়ুয়া, নীলিমা বড়ুয়া প্রমুখ।