অনলাইন ডেস্ক: শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরারের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘাতে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।পুলিশ লাঠিপেটা করে, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে বিক্ষোভকারীদের সচিবালয়ের ভেতর থেকে বের করতে পারলেও আশপাশের এলাকায় কয়েক ঘণ্টা ধরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষ চলে।এই সংঘর্ষের মধ্যে আহত ৪০ শিক্ষার্থী ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেছেন।দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে সোমবার জঙ্গি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। মন্ত্রণালয়ের দীর্ঘসূত্রতায় পরীক্ষা স্থগিতের সেই ঘোষণা আসে সোমবার রাত ৩টার দিকে। অনেক শিক্ষার্থীর কাছে সেই খবর না পৌঁছানোয় কেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে হয় তাদের।শিক্ষা উপদেষ্টার বরাতে তথ্য উপদেষ্টা সোমবার গভীর রাতে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি ফেইসবুকে জানান। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসে অনেক পরে, যা নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন।এরপর শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার এবং শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে অপসারণের দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা দেন বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা।আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার দুপুরে প্রথমে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ঘেরাও করতে যায়। সেখান থেকে বেলা দেড়টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে জড়ো হন।
ঢাকার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, ঢাকা কলেজ, সিটি কলেজ, আইডিয়াল কলেজ, নূর মোহাম্মদ কলেজ, মিরপুর বাংলা কলেজ, কমার্স কলেজ, আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, মিরপুর কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের চলমান এইচএসসি পরীক্ষার্থীসহ আরো কিছু শিক্ষার্থী এ কর্মসূচিতে অংশ নেন।শুরুতে তারা সচিবালয়ের তিন নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ দেখান। পরে প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্রের বাকি ফটোগুলোও বন্ধ করে দেন।
সিটি কলেজের শিক্ষার্থীর তানভীর বলেন, “গোপালগঞ্জের সামান্য কারণে এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেছে। অথচ কালকে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, বারবার বলার পরও তারা এইচএসসি পরীক্ষার স্থগিত করেনি। রাত ৩টা বাজে যখন স্থগিত করেছে ততক্ষণের সব শিক্ষার্থীরা জানতেও পারেনি।“সকালবেলা অনেকের পরীক্ষা দিতে বেরিয়েছে। এগুলো স্পষ্ট দায়িত্ব অবহেলা এবং একঘেয়েমি। আমরা এই শিক্ষা সচিব, শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগ চাই। তাদের পদত্যাগ নিশ্চিত না করে ঘরে ফিরে যাব না।”
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরেফিন বলেন, “প্রশ্নপত্রে ভুল, দায়িত্বে অবহেলাসহ বিভিন্ন কারণে আমরা শিক্ষা উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবের পদত্যাগ চাইছি। শিক্ষা বোর্ড সংক্রান্ত সব দায়িত্বশীলকে বহিষ্কার করতে হবে। সব শিক্ষা বোর্ডে একই প্রশ্নের পরীক্ষা হতে হবে।”এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের দাবি মুখে শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জুবায়েরকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় সরকার। তাদের অন্যান্য দাবি পর্যালোচনার জন্য কমিটি করা হবে বলে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর জানান।কিন্তু শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে তিন নম্বর গেইট ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়তে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।তারা সচিবালয়ের ভেতরে রাখা গাড়ি ভাঙচুর শুরু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর হন। শিক্ষার্থীদের সচিবালয়ের বাইরে সরিয়ে দিতে তারা লঠিপেটা ও কাঁদুনে গ্যাস ছুড়তে শুরু করেন।কিছু সময় পর সচিবালয়ের সামনের এলাকা অনেকটা ফাঁকা দেখা যায়। তবে পরে জিরো পয়েন্টে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়।
সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ উপ কমিশনার মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, “পরিস্থিতি উত্তপ্ত। নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। আমরা খুবই ব্যস্ত। কথা বলা সময় নাই।”বিকেল ৫টার দিকেও শিক্ষার্থীরা গুলিস্তান ও জিরো পয়েন্টে অবস্থান করছিল। সচিবালয়ের অনেকগুলো ফটক তখন খুলে দেওয়া হয়। আটকা পড়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা সেই সুযোগে বেরিয়ে যেতে পারেন।পরে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল ছুড়ে গুলিস্তানের দিক থেকেও শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেয়। বিকাল পৌনে ৬টার দিকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এলাকা স্বাভাবিক হয়।এদিকে সংঘর্ষ চলার মধ্যে ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান।হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. ফারুক বলেন, “তাদেরকে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন হলেন- আশিক (১৯) রাকিবুল হাসান (২১) আসাদ আহমেদ (১৮), হাসান (১৮), আফসানা (১৮) মুগ্ধ (১৯) অন্তর(২০) শাকিল (২৩) শাওন (১৯), তানসিন (২০) সিয়াম (১৮),মাহিম (১৮), রেদোয়ান ইসলাম (২০), হাসিব (১৮) ও নেহাল (২০)।