অনলাইন ডেস্ক: বিয়ের মাত্র এক সপ্তাহ যেতেই লাবনীর জীবনে নেমে আসে দুঃখের ঘনঘটা। জানতে পারেন তার দুটি কিডনি বিকল। সে সময় স্ত্রীকে সুস্থ করতে নিজের একটি কিডনিও দেয় স্বামী সাইফুল। তবে ভাগ্য যেন তার সহায় হয় না।তিন বছরের মাথায় আবারও বিকল হয়ে যায় স্বামীর দেওয়া কিডনিও। এখন চরম দুর্দশায় দিন কাটছে এই দম্পতির।চুয়াডাঙ্গার দর্শনা শান্তিপাড়ার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে লাবনী খাতুন। ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নিতে ২০২০ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে।তবে হাতে মেহেদির রং না শুকাতেই অসুস্থ হয়ে পড়েন লাবনী। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর জানতে পারেন তার দুটি কিডনি বিকল। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সুখ আসেনি তার জীবনে। বরং একের পর এক দুশ্চিন্তা ঘিরে রেখেছে তাকে।তার অসুস্থতায় ভালো নেই স্বামী সাইফুলও।
সাইফুল বলেন, নানা চিকিৎসায় ডাক্তার দেখানোর পরে এটা বোঝা যায় যে দুইটা কিডনি ড্যামেজ। ডাক্তার বলেন এটার চিকিৎসা হচ্ছে ডায়ালিসিস দিতে হবে আর নয়তো আরেকটা কিডনি পাল্টাতে হবে। এত টাকা-পয়সা তো আমাদের নেই। তাই করতে পারিনি।
পরে আমার ব্লাড গ্রুপের সঙ্গে তার ব্লাড গ্রুপ যখন মিলে যায়, তখন আমি একটা কিডনি তাকে দিয়েছি। দেওয়ার পরে দুই-তিন বছর ভালো ছিল। ভালো থাকার পরে এই এক দেড় বছর আবার অসুস্থ হয়ে যায়। চিকিৎসা করার পরে আমি যেটা দিয়েছিলাম সেটাও ড্যামেজ হয়ে গিয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন দ্রুতই একটি কিডনি প্রতিস্থাপন করা জরুরি।
এদিকে একটি কিডনি না থাকায় আগের মতো আর কাজ করার শক্তিও পান না সাইফুল। প্রতি সপ্তাহে লাবনীর ডায়ালিসিসের জন্য প্রয়োজন হয় সাত হাজার টাকা। যেখানে সংসার চালানোই দায় সেখানে চিকিৎসার অর্থ কিভাবে জোগাড় হবে সেই দুশ্চিন্তায় অসহায় দম্পতি। সাইফুল বলেন, ‘ডাক্তার আবার বলছে যে আরেকটা লাগালে সে ভালো থাকবে। নাহলে গিয়ে ডায়ালিসিস চালাতে হবে। ডায়ালিসিস চালাতে অনেক খরচ। সপ্তাহে সাড়ে ছয় হাজার-সাত হাজার টাকা লেগে যায় ডায়লিসিস দিতে। একটু সংসার চালানোই কষ্ট এখন। আমি কাজকর্ম করতে পারি না।’
অসুস্থ লাবনী কান্নাচোখে জানান নিজের কষ্টের কথা। বলেন, ‘দুনিয়াতে আমার হাজবেন্ড ছাড়া আমার আর কেউই নাই। আমার হাজবেন্ডেরও আমি ছাড়া আর কেউ নেই। মনে করেন সেই ক্ষেত্রে এখন আমার ডায়ালিসিস চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাইতেছে। আমি যদি একদিন ডায়ালিসিস না দেই হয়তোবা মনে হয় যে আমি পৃথিবীর বুকে আর নেই। আমার এত কষ্ট হয়।’
স্বজনদের সহযোগিতা ও সহায়সম্বল যা ছিল সবই বিক্রি করে স্ত্রীর চিকিৎসা করিয়েছেন স্বামী সাইফুল। ইতিমধ্যেই লাবনীর চিকিৎসায় খরচ হয়েছে প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। এখন অর্থাভাবে অসুস্থ জীবন কাটছে দুজনেরই। স্ত্রীকে বাঁচাতে সাইফুল চাইলেন সবার সহযোগিতা। স্বজন ও আশেপাশের প্রতিবেশীরাও জানান, সমাজের বৃত্তবানরা যদি এগিয়ে আসতো তাহলে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেত অসহায় এই দম্পতি।
