১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

১৯ জনকে লিবিয়ায় পাচার করে সাড়ে ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ, গ্রেপ্তার ১

অনলাইন ডেস্ক: গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরির লোভ দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে লিবিয়ায় যুবকদের পাচার ও সেখানে মাফিয়ার হাতে জিম্মি করে শারীরিক নির্যাতন এবং দেশে বসে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মানব পাচার চক্রের এক সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডির মানব পাচার ইউনিট (টিএইচবি)। গ্রেপ্তারকৃতের নাম মোহাম্মদ নজির হোসেন (৫৫)। গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে সিআইডির তদন্তাধীন দুইটি পৃথক মানব পাচার মামলা রয়েছে।তার বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার ইধনপুর এলাকায়। আজ বৃহস্পতিবার সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নজির হোসেন জানায়, দীর্ঘদিন ধরে সে ভুক্তভোগীদের ইউরোপ নেওয়ার লোভ দেখিয়ে লিবিয়ায় পাচার করে আসছে। সর্বমোট ১৯ জনের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি।এর মধ্যে ৯ জন দেশে ফিরতে পেরেছেন, বাকিরা এখনো লিবিয়ার বিভিন্ন মাফিয়ার হাতে জিম্মি।
এদিকে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ থানায় দায়ের হওয়া মামলার এজাহার অনুযায়ী, চক্রটির গ্রিসপ্রবাসী সদস্য মো. শরীফ উদ্দিন ২০২৪ সালে দেশে এসে দুই যুবককে গ্রিসে উচ্চ বেতনের চাকরি দেওয়ার প্রস্তাব দেন। জনপ্রতি ১৫ লাখ টাকা চুক্তির অংশ হিসেবে প্রথমে দুজনের কাছ থেকে পাসপোর্ট ও দুই লাখ টাকা করে নেওয়া হয়। এরপর চলতি বছরের জুলাই মাসে দুজনকে বাংলাদেশ থেকে দুবাই, সেখান থেকে মিসর হয়ে লিবিয়ায় পাঠানো হয়।লিবিয়ায় পৌঁছে তারা চক্রের নির্ধারিত লোকের কাছে হস্তান্তরিত হওয়ার পর একদল মাফিয়া তাদের আটক করে মারধর ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মুক্তিপণ দাবি করে। বাংলাদেশে বসেই চক্রের সদস্য নজির হোসেন ভুক্তভোগী দুই পরিবারের কাছ থেকে ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং ১৬ লাখ টাকা মোট প্রায় ৩৮ লাখ টাকা আদায় করে। মুক্তিপণ নেওয়ার পরও ভুক্তভোগীদের মুক্তি না দিয়ে মাফিয়ারা তাদের লিবিয়ার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। ৪৫ দিন কারাভোগের পর তারা আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর সহায়তায় গত ২৫ আগস্ট দেশে ফিরে আসেন।এদিকে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে ডেমরা মডেল থানায় দায়ের হওয়া আরেক মামলায়ও নজির হোসেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
এ মামলায় অভিযোগ রয়েছে, আরেক অভিযুক্ত মো. বাহাদুর ফারাজীর প্রলোভনে এক ভুক্তভোগী গ্রিসে যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকা ও পাসপোর্ট দেন। পরে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার নজির তার হাতে পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকিট তুলে দিয়ে দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। লিবিয়ায় পৌঁছেই তাকে নির্যাতন করে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। নজির হোসেন তার পরিবারের কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা আদায় করে। পরে ভুক্তভোগীকে মরুভূমিতে ফেলে দেওয়া হয় এবং পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। ১৯ দিন কারাভোগের পর আইওএম-এর সহায়তায় তিনি দেশে ফেরেন। এ মামলায় আগেই চক্রের আরেক সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
সিআইডি জানায়, গ্রেপ্তার নজির হোসেন ২০২১ সালে বিমানবন্দর থানার প্রতারণা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিও। চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত। সিআইডির মানব পাচার ইউনিট বর্তমানে দুটি মামলারই তদন্ত করছে। নজির হোসেন দুই মামলায়ই নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। তাকে আদালতে সোপর্দ ও রিমান্ডের আবেদনসহ পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম চলমান।

আরও পড়ুন