৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

হেরাথ-পোথাসের দাবি, নাসুমকে থাপ্পড় মারেননি হাথুরু

ক্রীড়া ডেস্ক : ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ চলাকালে ড্রেসিংরুমে বাঁহাতি স্পিনার নাসুম আহমেদকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই বরখাস্ত করা হয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তন প্রধান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহেকে। তবে তিনি শুরু থেকেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন। এবার একই কথা বললেন তার সেসময়ের কোচিং প্যানেলে থাকা দুই সদস্য সহকারী কোচ নিক পোথাস এবং স্পিন বোলিং কোচ রঙ্গনা হেরাথ। সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার ‘কোড স্পোর্টস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন তারা। দুজনেই অভিযোগটিকে ‘অতিরঞ্জিত ও ভিত্তিহীন’ বলে উল্লেখ করেছেন।
নাসুমের চড়কাণ্ড নিয়ে ৪৭ বছর বয়সী হেরাথ বলেন,, ‘আমি সরাসরি বলতে পারি যে, এমন কিছুই ঘটেনি। বিশ্বকাপ চলাকালীন তাঁর আশেপাশে অনেক ক্যামেরা ছিল। মানুষ চাইলেই বলতে পারে যে, একটি ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রমাণ তো থাকতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বলছি, এরকম কিছুই ঘটেনি। কারণ আমি সেখানে ছিলাম। চড় মারা ও (পিঠে) ধাক্কা দেওয়া সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার।’
একই ঘটনা নিয়ে ৫১ বছর বয়সী পোথাসের ভাষ্য, ‘আমি তাকে (হাথুরুসিংহে) ভালোভাবেই চিনি। তিনি খুবই অভিজ্ঞ আন্তর্জাতিক ও পেশাদার কোচ। যদি তিনি এরকম করতেন, তাহলে এই পর্যায়ে টিকে থাকতে পারতেন না। আমি মনে করি, যারাই এমন অভিযোগ করেছেন, তাদের (হাথুরুর প্রতি) কিছুটা ক্ষোভ থাকতে পারে। আর যে (নাসুম) অভিযোগ করেছে, সে হয়তো ভাবেনি বিষয়টি এভাবে বিস্ফোরিত হবে।’
পোথাস আরও বলেন, ‘এখন যা কিছু ঘটেছে, তাতে আমার মনে হয় না সে বুঝতে পেরেছে যে, সে কতটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে এবং বাংলাদেশ অধ্যায়ের পর হাথুরুর জীবন কতটা কঠিন করে তুলেছে। খেলোয়াড়দের পিঠে চাপড় মারা সব সময়ই ঘটে। ভাষার ভিন্নতার কারণে, আপনাকে অনেক সময় হাতের ইশারার মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়।’
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ভরাডুবির কারণ অনুসন্ধান করতে পারফরম্যান্স মূল্যায়ন কমিটি গঠন করেছিল বিসিবি। সেখানে নাসুম আহমেদকে নাকি শারীরিকভাবে আঘাত করেছিলেন সেই সময়ের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। নাজমুল হাসান পাপন সভাপতি থাকার সময় মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে এমন কোন ঘটনা খুঁজে পায়নি বিসিবি।
গত বছর ৫ আগস্টের পর বিসিবি সভাপতি হন ফারুক। তার নেতৃত্বাধীন বিসিবিরও মনে হয়েছিল, বিশ্বকাপের সময় নাসুমকে থাপ্পড় মেরেছিলেন হাথুরুসিংহে। তাই অসদাচরণ ও চাকরিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চুক্তির মেয়াদ ফুরানোর পাঁচ মাস আগেই হাথুরুসিংহেকে ছাঁটাই করে বিসিবি। বরখাস্ত হওয়ার কয়েকদিন পর অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের কাছে ফিরে যান তিনি।
হাথুরু দাবি করেন, তিনি নাসুমকে চড় মারেননি, বরং ব্যাটসম্যানদের গ্লাভস পাঠানোর জন্য পিঠে হালকা টোকা দিয়েছিলেন মাত্র। “আমি কোনো খেলোয়াড়কে আঘাত করিনি, এমনকি কখনও ঝগড়াও করিনি,” বলেন তিনি।
হাথুরুসিংহের মতে, তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল বিসিবির বর্তমান সভাপতি ফারুক আহমেদের পূর্বপরিকল্পিত পদক্ষেপ। তার ভাষায়, “আমি জানি না, গত ছয় মাসে কতগুলো সুযোগ হাতছাড়া করেছি। বিসিবি শুধু আমার চুক্তি বাতিলের চেষ্টা করেনি, তারা আমার পুরো ক্যারিয়ারটাই ধ্বংস করেছে।”
হাথুরুসিংহে আরও জানান, বরখাস্ত হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তিনি চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেছেন। “আমার সঙ্গে সবসময় একজন ড্রাইভার ও একজন বন্দুকধারী থাকত। বরখাস্তের পর শুধু ড্রাইভার ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, পরিস্থিতি ভালো নয়,” বলেন হাথুরুসিংহে।
টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে টিভিতে নিজের বরখাস্ত হওয়ার খবর দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। ব্যাংক ম্যানেজার পর্যন্ত তাকে সাবধান করে বলেন, রাস্তায় গেলে বিপদ হতে পারে। পরে এক বন্ধুর সহায়তায় টুপি ও হুডি পরে রাতের ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক এই কোচ।প্রায় ছয় বছর দুই দফায় বাংলাদেশ দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন চান্দিকা হাথুরুসিংহে। শেষ অধ্যায়টি তিনি মনে করছেন দুঃখজনক ও অমানবিক।

আরও পড়ুন