নিজস্ব প্রতিবেদক: সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে নগরের দুই নম্বর গেইট ও ষোলশহর এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা চশমা হিল এলাকায় জড়ো হন। সেখানে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির ভেতর থেকে আসবাবপত্র ও একটি মোটরসাইকেল বের করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। একই সময় নওফেলের বাসভবনের সামনেও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।
এর আগে হাদির মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে রাত ১১টার দিকে নগরের বিপ্লব উদ্যান, দুই নম্বর গেইট ও ওয়াসা মোড় এলাকায় শতাধিক তরুণ-যুবক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা সড়ক অবরোধ করে ‘হাদি, হাদি’ স্লোগানসহ হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানান।
বিক্ষোভ চলাকালে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা চট্টগ্রামে অবস্থিত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশন ঘেরাওয়ের ঘোষণাও দেয়। একই সঙ্গে তারা ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধের দাবিও তোলে। এদিকে নগরের আরেক অংশে ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা থাকলেও খুলশী ও পাঁচলাইশ থানার দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট সড়কে চলন্ত রিকশায় থাকা অবস্থায় ওসমান হাদিকে খুব কাছ থেকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিটি তার মাথার ডান দিক দিয়ে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং ব্রেনের একটি অংশে রয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) উন্নত চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়।বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে ওসমান হাদির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদের মোকাবিলায় মহান বিপ্লবী ওসমান হাদিকে আল্লাহ শহিদ হিসেবে কবুল করেছেন।’ ইনকিলাব মঞ্চের ফেসবুক পেজ থেকেও তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়।
ঢাকায় হাদির অস্ত্রোপচারে অংশ নেওয়া নিউরোসার্জন অধ্যাপক আবদুল আহাদ এক ভিডিওবার্তায় সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।এদিকে হাদির মৃত্যুর ঘটনায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,“কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ করছি। কারও ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।”
হাদির মৃত্যুতে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।





