১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: তারেক রহমান

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘যে স্বৈরাচারকে বাংলাদেশের মানুষ কিছুদিন আগে বিতাড়িত করেছে, সেই স্বৈরাচারের পুনর্জাগরণ প্রতিরোধ বা প্রতিহত করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একই সঙ্গে দেশ যেন কোনো চরমপন্থা বা মৌলবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হতে না পারে সেটিও আমাদের লক্ষ্য।’রবিবার (১৭ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি যুক্তরাজ্যের লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন। ‘গণতন্ত্রে উত্তরণে কবি-সাহিত্যিকদের ভূমিকা ও করণীয়’ শীর্ষক সভার আয়োজন করে জাতীয় কবিতা পরিষদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, ‘আজকের এই শ্রাবণ দিনে, যে বিশ্বাস আর প্রত্যয়ের কথা বহু বক্তা এখানে বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে উচ্চারণ করেছেন। আমাদের আদর্শিক অবস্থানও ঠিক এক এবং অভিন্ন। এদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের দৃঢ় অবস্থানের সাথে কিন্তু আমাদের বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। আমাদের সকলের হয়তো রাজনৈতিক মতাদর্শের আদর্শিক অবস্থান এক নাও হতে পারে।এটি কিন্তু কোনো সমস্যার বিষয় না। এটিকে কেউ দয়া করে সমস্যা হিসেবে দেখবেন না। এই দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের অবিচল আস্থা প্রকাশের জায়গায় কিন্তু আমরা সকলে এক। এটা কিন্তু আমাদের সকলের মধ্যে কমন বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘এদেশের মালিকানার একমাত্র দাবিদার এই দেশের সকল নাগরিক। এই সত্যটাকে যদি আমরা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই তাহলে, মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাক স্বাধীনতার পক্ষে একটা অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অর্থাৎ একটি জবাবদিহিতার অবস্থা দেশে তৈরি করা একান্তই প্রয়োজন। আমরা যদি সেটি করতে সক্ষম হই, এখানে কবি-সাহিত্যিকবৃন্দ বক্তব্য রেখেছেন। বক্তব্যে যারা লেখার স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলেছেন, মতপার্থক্য তুলে ধরার কথা বলেছেন, সমালোচনার কথা বলেছেন, সেই অধিকারগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
সেটা করা সক্ষম করা সম্ভব হবে মানুষের ভোটের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সকল শহীদের রক্তের দায় পরিশোধের সময় এসেছে আজ। এই দেশের একজন কৃতজ্ঞ সন্তান হিসেবে, আমাদের সকলের কণ্ঠে এজন্য ঐক্যের প্রতিধ্বনি উচ্চারিত হোক। সেই প্রত্যাশা করছি।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত দেশের কবি-সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের সুখ-দুঃখ, ভালোবাসা, উচ্ছ্বাস, আনন্দের প্রতিচ্ছবিও কবি-সাহিত্যিকবৃন্দ। আমাদের কষ্ট, বেদনা, যন্ত্রণার মুহূর্তের যে শব্দের পংক্তিমালা যেমন সহানুভূতির বন্ধু হয়ে আসে; ঠিক তেমনি বিজয়ের আনন্দ, উৎসবের বার্তাবাহক হিসেবেও কিন্তু আবর্বিত হন কবি সাহিত্যিকবৃন্দ। আমাদের মন যেটা বলতে বা শুনতে চায়, আমরা অনেক সময় বিভিন্ন কারণে প্রকাশ করতে পারি না, একটা সীমাবদ্ধতা থাকে। কবি সাহিত্যিকবৃন্দ আপনারা আমাদের সেই কথা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরতে পারেন। আমাদের যে মনোজগত আছে, তার ভিতরে আপনারা স্থান করে নিতে পারেন আপনাদের গুণ দ্বারা। সেখানেই আপনারা অসাধারণ এবং আমরা সাধারণ। যুগে-যুগে কবি সাহিত্যিকরা নির্ভিক চিত্তে মুক্তির কথা বলেছেন। কবিরাই বলেছেন, বল বীর চির উন্নত মম শির। দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি চূড়ান্ত আনুগত্য থেকে কবি শহীদুল্লাহ লিখেছিলেন ‘জাতির পতাকা খামছে ধরেছে আজ পুরনো শকুন’। তখন আমরা সবাই সকুচিত হই, প্রত্যয়ী হই। স্বাধীনতা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই, সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের দিনগুলোতে কবিতা আর দেশাত্মবোধ সংগীত ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ উপস্থিত কবি-সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এখন কেন আপনাদের চিন্তা আগুন নিয়ে হবে। আপনারা পুষ্প নিয়ে এখন চিন্তা করতে পারেন না? পাথরের বাগানে পুষ্প ফোটানোর চিন্তা করতে পারেন না? প্রেমের রাজ্যে আপনারা আপনাদের ভুবন বাড়ি তৈরি করবেন। আপনারা ফুলকে আপনার সাথে কথা বলতে বাধ্য করবেন। সেরকম কবি হবেন, আপনাদের ফুলের সৌরব সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে। আপনারা এখনো আগুনের কথা বলেন কেন? আগুনের চ্যাপ্টার তো শেষ হয়ে গেছে ৫ আগস্ট (২০২৪ সালের ৫ আগস্ট)। এখন আপনারা ফুলের, গণতন্ত্রের, মানুষের অধিকারের সৌরভ নিয়ে আসবেন, যেন আমরা সারা দেশে তা ছড়িয়ে দিতে পারি, সেই বয়ান নিয়ে আসবেন।
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত কলমজীবীরা শেখ হাসিনাকে সার্ভিস দিয়েছে, স্বৈরাচারকে সার্ভিস দিয়েছে, গণহত্যার সময় তাদের কলম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কালি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। যখন মানুষকে গুম, হত্যা করেছে তখন তাদের কবিতা আর বের হয় নি। যেই একটি শ্রেণি বাংলাদেশে পয়দা হয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধে আপনারা আগ্নেয়গিরির লার্ভাটা পয়দা করবেন। আর জনগণের উদ্দেশ্যে ফুলের সৌরভ দেবেন গণতন্ত্রের জন্য। আপনারা আসমান থেকে বার্ডস আই দিয়ে সমস্ত দেশের চিত্রটা দেখেন। কবিরা স্বপ্ন দেখে বলেই কোন দেশ স্বাধীন হয়। কোন জাতি মুক্ত হয়। সেই কবিদের স্বপ্নের ওপর ভিত্তি করেই বিপ্লবীদের জন্ম হয়। কবিদের স্বপ্নের কারণেই কোন জাতি মুক্ত হয়। সেভাবে আপনারা পাহাড়ের চাটানে বসে, পরওয়াজ করে, আসমানে সফর করতে-করতে দেশকে বার্ডস আই দিয়ে দেখবেন। সেখানে কি-কি বিচ্যুতি হয়, কি-কি সৌন্দর্য লাগানো লাগে, সেই কবিতা আপনারা বিনির্মাণ করবেন। সেই কবিতা আমাদেরকে পরিচালিত করবে, এই জাতিকে সমৃদ্ধ করবে।’
মতবিনিময় সভায় সমাপনী বক্তব্য রাখেন, জাতীয় কবিতা পরিষদ সভাপতি কবি মোহন রায়হান, উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য কবি মতিন বৈরাগী, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার সম্পাদক আবু সাঈদ খান, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মনি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহদি আমিন প্রমুখ।

আরও পড়ুন