১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সিএমপি কমিশনারের ওয়্যারলেস বার্তা ফাঁস : খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ

অনলাইন ডেস্ক: গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় আহত হন এসআই আবু সাঈদ রানা। ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের টহলদলের সামনে কিংবা অভিযানের সময় কেউ অস্ত্র বের করলে আত্মরক্ষায় দেখামাত্র গুলি করতে চট্টগ্রাম মেট্রাপলিটন পুলিশ (সিএমপি) সদস্যদের মৌখিক নির্দেশ দেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।
কিন্তু পুলিশ কমিশনারের ওই বার্তা কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ পুলিশের বাইরে গেল, সে ব্যাপারে খোঁজ নিচ্ছেন সিএমপি কর্মকর্তারা। তাঁরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে গোপন বার্তা দেওয়া হয় ওয়্যারলেসের মাধ্যমে।নিজদের গোপন বার্তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি চিন্তার। সিএমপির কোনো কর্মকর্তা বার্তাটি ভিডিও রেকর্ড করে ছেড়ে দিয়েছেন বলে ধারণা করছেন তাঁরা।ওই ঘটনা ফাঁস হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, কোনো একটি ভবনের ভেতর থেকে ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়েছে। তিন মিনিট ৯ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে একজনকে ওয়াকিটকি হাতে ধরে রাখতে দেখা যায়।এ ছাড়া তিন মিনিট ৯ সেকেন্ডর একটি অডিও রেকর্ডও পাওয়া গেছে।
সিএমপি সূত্রে জানা গেছে, ভিডিও ধারণকারীকে শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ। তারা ভিডিওটির বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্লেষণ করছেন। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার ডিসি (সদর) ফয়সাল আহম্মেদ  বলেন, ‘ওয়্যারলেসে দেওয়া বক্তব্য কিভাবে বাইরে গেল, আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি।বিষয়টি আমরা দেখছি।’
গত ১১ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানা এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় এসআই আবু সাঈদ রানা আহত হওয়ার পর গত মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) রাতে ওয়্যারলেসে সিএমপির সব সদস্যদের উদ্দেশে ওয়ারল্যাস বার্তায় হাসিব আজিজ বলেন, ‘২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে যে অস্ত্রের প্রাধিকার ছিল, ওই অস্ত্রের গোলাবারুদের প্রাধিকার অনুযায়ী থানার মোবাইল পার্টি, প্যাট্রল পার্টি ও ডিবির টিমগুলো সব র‌্যাংকের পুলিশ অস্ত্র বহন করবে। আগ্নেয়াস্ত্র ছাড়া কোনো মোবাইল, প্যাট্রল, ডিবি ও চেকপোস্ট দল ডিউটিতে বের হবে না। অবশ্যই ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগের অস্ত্রের প্রাধিকার অনুযায়ী লাইভ অ্যামুনিশনসহ তাদেরকে বের হতে হবে। প্রাধিকার অনুযায়ী অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং স্যুট পরে তারপর ডিউটিতে যাবে।’
হাসিব আজিজ বলেন, শুধুমাত্র রাবার বুলেট দিয়ে আমাদের কাজ হচ্ছে না। বন্দরে (বন্দর থানা) আমার একজন সাব-ইন্সপেক্টর গুরুতর আহত হয়েছেন। আরেক দিন আরো বড় দুর্ঘটনা ঘটবে। আমি সবাইকে বলে দিয়েছি, বন্দর থানার সাব ইন্সপেক্টর যে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন, ওই পরিস্থিতিতে কেউ পড়লে কোনো অবস্থাতেই যেন দুই-চারটা লাশ ছাড়া মোবাইল পার্টি, প্যাট্রল পার্টি ফেরত না আসে। সোজা কথা, পুলিশের কোনো টহল পার্টির সামনে অস্ত্র বের করা মাত্র, আই রিপিট, অস্ত্র বের করা মাত্র, সেটা আগ্নেয়াস্ত্র হতে পারে বা সেটা ধারালো অস্ত্র হতে পারে। অস্ত্র বের করা মাত্র গুলি হবে। এতে কোনো সন্দেহ নাই, এটা সবাইকে বলে দিয়েছি।
হাসিব আজিজ আরো বলেন, ধারালো অস্ত্র বা আগ্নেয়াস্ত্র পুলিশের টহল পার্টির সামনে বের করা মাত্র গুলি করবে। আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার, দণ্ডবিধি ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত আত্মরক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার সব পুলিশ অফিসারের রয়েছে। অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়ার আগে অস্ত্র বের করা মাত্রই গুলি হবে। হয় মাথায়, নয়তো বুকে নয়তো পিঠে করবে। সরকারি গুলির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, গত সোমবার চট্টগ্রাম নগরীর বন্দর থানার সল্টগোলা এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করার তথ্য পেয়ে অভিযানে যায় বন্দর থানার এসআই রানার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। ওই সময় তল্লাশি চলাকালে রানার মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে বন্দর থানা এলাকায় যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে ছুরি, ধারালো অস্ত্রসহ ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করে।

আরও পড়ুন