২রা আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন চালাচ্ছে আরাকান আর্মি: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মতো আরাকান আর্মিও রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন চালাচ্ছে। এতে দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।সোমবার (২৮ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটি জানায়, মিয়ানমারে জাতিবিদ্বেষের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। একদিকে সেনাবাহিনী, অন্যদিকে সশস্ত্র আরাকান আর্মি দেশটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জাতিগত নৃশংসতা চালাচ্ছে। আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইনের এলাকাগুলোতে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে লুটপাট, আটক ও নির্যাতন, নিপীড়ন চালাচ্ছে। তাদের জোর করে বাহিনীতে নেওয়া হচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন বলেন, রাখাইনে সেনাবাহিনীর মতো আরাকান আর্মিও দমননীতি অনুসরণ করছে। রোহিঙ্গাদের ওপর এই নিপীড়নমূলক আচরণ বন্ধ করা উচিত।
২০২৩ সালে নতুন করে সংঘর্ষ শুরুর পর থেকে মিয়ানমারে আরাকান আর্মির দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে অনেকে। তাদের মধ্যে ১২ জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে এইচআরডব্লিউ। গত এপ্রিল থেকে জুলাই মাসে এসব সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।তেমনি একজন শরণার্থী এইচআরডব্লিউকে বলেন, আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে জীবন অসম্ভব রকম কড়াকড়ির মধ্যে ছিল। অনুমতি ছাড়া আমাদের কাজ করা, মাছ ধরা, চাষাবাদ এমনকি চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা ছিল। আমরা খাবারের তীব্র সংকটে ছিলাম। এ সময় অধিকাংশ মানুষ একে অপরের কাছে ভিক্ষা করে বেঁচে ছিলেন।
২০২৩ সালের শেষ ভাগ থেকে রাখাইন ও চিন রাজ্যে চার লাখের বেশি মানুষ দেশের মধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। আর এ সময় প্রায় দুই লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। আরাকান আর্মি তাদের কৃষিজমি, বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাছ ধরার সরঞ্জাম, জ্বালানির কাঠ এমনকি কবরস্থান পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়।পালিয়ে আসা আরও দুই শরণার্থী এইচআরডব্লিউকে বলেন, মে মাসে তাদের কবরস্থানটি ধ্বংস করে দেয় আরাকান আর্মি। তাদের বলে, এখন থেকে ধানক্ষেতে মরদেহ দাফন করতে হবে।
২০২৪ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করার পর আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও অন্যান্য রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠী আবারও রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়েছে। যুদ্ধ এবং রোহিঙ্গা গ্রামবাসীদের জোর করে বাহিনীতে নেওয়ার ফলে রোহিঙ্গা মুসলিম ও বৌদ্ধ রাখাইনদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা আরও তীব্র হয়েছে। ২০২৪ সালের মে থেকে এখন পর্যন্ত কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে নতুন করে অন্তত এক লাখ ২০ হাজার শরণার্থী নিবন্ধিত হয়েছেন। সম্প্রতি আসা রোহিঙ্গারা কোনো সরকারি ত্রাণ বা সহায়তা না পাওয়ার কথা বলেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ মনে করে, সংকট সমাধানের একমাত্র উপায় হচ্ছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো। তবে জাতিসংঘ ও উদ্বিগ্ন দেশগুলোর উচিত জোর দিয়ে বলা যে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনের কোনো পরিবেশ এখন নেই।

আরও পড়ুন