১৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় আরও ৩৬টি দেশ যুক্ত করার পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের

অনলাইন ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন আরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি বিবেচনা করছে বলে রয়টার্সের হাতে আসা স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক অভ্যন্তরীণ কেবল বার্তায় জানা গেছে।এই মাসের শুরুতে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ঘোষণাপত্রে ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। তিনি বলেন, এই পদক্ষেপ “বিদেশি সন্ত্রাসবাদী” এবং অন্যান্য জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষার জন্য জরুরি।এই নির্দেশনা ট্রাম্পের দ্বিতীয় দায়িত্বকালের শুরুতেই চালু করা এক কড়া অভিবাসন নীতির অংশ, যার আওতায় শত শত ভেনেজুয়েলান নাগরিককে এল সালভাদরে ফেরত পাঠানো হয়েছে যাদের সন্দেহ করা হয়েছে গ্যাং সদস্য হিসেবে। এছাড়াও কিছু বিদেশি শিক্ষার্থীকে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং অন্যদের ফেরত পাঠানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও স্বাক্ষরিত এক অভ্যন্তরীণ কূটনৈতিক কেবল বার্তায় স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি উদ্বেগের কথা উল্লেখ করে, যা সমাধানের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘ডিপার্টমেন্ট ৩৬টি উদ্বেগজনক দেশ চিহ্নিত করেছে, যাদের নাগরিকদের প্রবেশ সম্পূর্ণভাবে স্থগিত করার সুপারিশ করা হতে পারে যদি তারা ৬০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত মানদণ্ড ও শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়।’ ওয়াশিংটন পোস্ট প্রথম এই খবর প্রকাশ করে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের উদ্বেগগুলোর মধ্যে ছিল, কিছু দেশের সরকার নির্ভরযোগ্য পরিচয়পত্র ইস্যু করতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক, কিংবা দেশটির পাসপোর্টের নিরাপত্তা সন্দেহজনক। আরও কিছু দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নিজ দেশের নাগরিকদের ফেরত নিতে সহযোগিতা করছে না অথবা তাদের নাগরিকরা মার্কিন ভিসার শর্ত ভঙ্গ করে দীর্ঘদিন অবস্থান করছে।কিছু দেশের নাগরিকদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, ইহুদিবিরোধী বা আমেরিকাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগও তোলা হয়েছে।
বার্তায় উল্লেখ করা হয়েছে, সব উদ্বেগ প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।এক জ্যেষ্ঠ স্টেট ডিপার্টমেন্ট কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা আমেরিকানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং বিদেশিদের আমাদের আইন মেনে চলা নিশ্চিত করতে নিয়মিত আমাদের নীতিমালা পর্যালোচনা করি।’ তবে তিনি অভ্যন্তরীণ আলোচনার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।তিনি আরও বলেন, “আমরা জাতীয় নিরাপত্তা ও জননিরাপত্তার সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে আমাদের ভিসা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশ ও জনগণকে সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
যেসব দেশ ৬০ দিনের মধ্যে এসব উদ্বেগ সমাধান না করলে সম্পূর্ণ বা আংশিক নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারে, সেগুলো হলো:
অ্যাঙ্গোলা, অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, বেনিন, ভূটান, বুর্কিনা ফাসো, কেপ ভার্দে, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, আইভরি কোস্ট, কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র, জিবুতি, ডোমিনিকা, ইথিওপিয়া, মিশর, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ঘানা, কিরগিজস্তান, লাইবেরিয়া, মালাউই, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, সেন্ট কিটস ও নেভিস, সেন্ট লুসিয়া, সাও টোমে ও প্রিন্সিপে, সেনেগাল, দক্ষিণ সুদান, সিরিয়া, তানজানিয়া, টোঙ্গা, টুভালু, উগান্ডা, ভানুয়াতু, জাম্বিয়া এবং জিম্বাবুয়ে।এটি হবে চলতি মাসের শুরুতে কার্যকর হওয়া নিষেধাজ্ঞার একটি বড় সম্প্রসারণ।
ইতোমধ্যে যেসব দেশ এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছে, সেগুলো হলো:আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, ইকুয়েটোরিয়াল গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান ও ইয়েমেন।এছাড়াও সাতটি দেশের বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান ও ভেনেজুয়েলা নাগরিকদের প্রবেশ আংশিকভাবে সীমিত করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে সাতটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের উপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, যা পরবর্তীতে একাধিক ধাপে পরিবর্তিত হয়ে ২০১৮ সালে সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক অনুমোদিত হয়।

আরও পড়ুন