নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীন বলেছেন, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাম্প্রতিক অগ্রগতি, সংস্কার ও অর্জন বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আগামী ২০২৮ সালের মধ্যে ভূমিসেবা পুরোপুরি হয়রানিমুক্ত ও জনবান্ধব করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। মিউটেশন, এলডি ট্যাক্স ও খতিয়ান সেবা এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে। পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে যে কোন সময়ে যে কোন নাগরিক ভূমি অফিসে না এসে ঘরে বসে নিজেই নামজারির আবেদন, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ, খতিয়ান সেবা ও ভূমি সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারছেন।
রোববার সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গনে আয়োজিত ৩ দিনব্যাপী ভূমি মেলার শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসচেতনতামূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ভূমি মেলার এবারের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে-‘নিয়মিত ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান করি, নিজের জমি সুরক্ষিত রাখি’। ভূমি মেলার উদ্বোধন উপলক্ষে শুরুতে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। এটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর পর বেলুন উড়িয়ে ৩ দিনব্যাপী ভূমি মেলার শুভ উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি। ভূমি মন্ত্রণালয়, ভূমি সংস্কার বোর্ড ও ভুমি ব্যবস্থাপনা অটোমেশন প্রকল্পের সার্বিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করা হয়। ভূমি মেলা উপলক্ষে সভা চলাকালীন সময়ে বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। সভার শুরুতে অনলাইন ভূমিসেবা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক উত্তর বঙ্গীয় গম্বীরা সংগীত পরিবেশন করা হয়। অনুষ্ঠানে ৬টি ভূমিসেবা সহায়তা কেন্দ্রের প্রতিনিধির হাতে অনুমতিপত্র, গ্রাহকদের হাতে খাস জমির কবুলিয়ত ও ভূমি অধিগ্রহণের এল.এ চেক বিতরণ করা হয়। শেষে মেলার স্টল পরিদর্শন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিভাগীয় কমিশনার ড. মোঃ জিয়াউদ্দীনসহ অন্যান্যরা।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে ও নগরীর চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইউছুফ হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ভূমি মেলার শুভ উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও জনসচেতনতামূলক সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রাম বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী ও বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মনোয়ারা বেগম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন নগরীর আগ্রাবাদ সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভির হাসান তুরান। বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় ও জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা ও সাংবাদিকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম বলেন, সারা দেশব্যাপী ভূমি উন্নয়ন কর এখন শতভাগ অনলাইনে অর্থবছরভিত্তিক আদায় করা হচ্ছে। জমির নামজারী খতিয়ান পেতে হলে দখল, দলিল ও দাখিলা প্রয়োজন। দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত ভূমিসেবা নিশ্চিত করতে চট্টগ্রামসহ ৮টি বিভাগীয় শহরে ৬টি সংস্থা/এজেন্সীকে অনুমতি দেয়া হয়েছে। আমরা সবসময় ভূমিসেবা দিয়ে আসছি। ভূমিসেবার দূর্নাম কাটিয়ে সুনাম ও স্বচ্ছতা আনয়নে চট্টগ্রামসহ সারাদেশে একযোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের শাসক নন, সেবক। দেশের সকল ভূমি অফিস ক্যাশলেস ও নাগরিক বান্ধব অফিস হিসাবে ঘোষিত হয়েছে। পুরোপুরি অনলাইন হওয়ার ফলে ভূমিসেবা বাবদ সরকারি আয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে বহুগুণে।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ আহসান হাবীব পলাশ বলেন, বিভিন্ন কারণে ভূমি সংক্রান্ত সমস্যাগুলো প্রকট আকার ধারণ করেছে। স্বাধীনতার ৫৫ বছরেও সুপ্রতিষ্ঠিত ভূমি ব্যবস্থাপনা পাইনি। ২০ কোটি মানুষের দেশে ৩৫ লক্ষ মামলা ভূমি বিষয়ক। এর থেকে উত্তরণের জন্য সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজড করেছে। এখন থেকে মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে নামজারীসহ যাবতীয় ভূমিসেবা গ্রহণ করতে পারছে। ভূমিসেবাগুলো নিতে হলে আমাদেরকে স্মার্ট হতে হবে, ধৈর্য্য হারা হলে চলবে না। ভূমিসেবা বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ নূরুল্লাহ নূরী বলেন, বাংলাদেশের ভূমি ব্যবস্থাপনা যাতে একই ছাতার নিচে একটি সিষ্টেমে চলে আসে, সে লক্ষ্যে সরকার সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ভূমি ব্যবস্থাপনা অনলাইন হওয়ায় জনগণ ঘরে বসেই হয়রানি, দুর্নীতি ও দালালমুক্ত ভূমিসেবা গ্রহণ করছে। এরই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মনোয়ারা বেগম বলেন, আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনবান্ধব ভূমিসেবার বিকল্প নেই। ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ভূমি সংক্রান্ত সেবাসমূহ অটোমেশনের মাধ্যমে জনগণের নিকট পৌঁছানোর লক্ষ্যে নানাবিধ কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। এ সকল কার্যক্রম সর্বসাধারণের মাঝে ব্যাপক আকারে প্রচার প্রচারণা করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে মেলা চলাকালীন ১২টি স্টলের মধ্যে ৬টি স্টলে মহানগরের ৬টি সার্কেলের যাবতীয় ভূমি সেবা প্রদান করছে। ২টি স্টলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এল.এ শাখা ও রেকর্ডরুমের সেবা, ২টি স্টলে চট্টগ্রাম জেলার জরিপ ও ভূমির রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত সেবা এবং অপর ২টি স্টলের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তের ভূমি বিষয়ক সেবা অর্থ্যাৎ ভূমি উন্নয়ন কর প্রদান, ই-নামজারীর আবেদনসহ অন্যান্য সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
