১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ভারি বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গাজাবাসী, ঠাণ্ডায় শিশুর মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গাজা উপত্যাকার ওপর দিয়ে বৃহস্পতিবার মুষলধারে বৃষ্টি বয়ে যায়। এতে দুই বছরের যুদ্ধের কারণে বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর আশ্রয় হিসেবে ব্যবহৃত শত শত তাঁবু পানিতে তলিয়ে যায়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, ঠাণ্ডাজনিত কারণে এক শিশু কন্যার মৃত্যু হয়েছে।চিকিৎসকেরা বলেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে পরিবারের তাঁবুতে পানি ঢুকে যাওয়ার পর আট মাস বয়সী রাহাফ আবু জাজার ঠান্ডায় মারা যায়।কান্নায় ভেঙে পড়ে রাহাফকে কোলে নিয়ে তার মা হেজার আবু জাজার বলেন, ঘুমানোর আগে তিনি মেয়েকে খাইয়েছিলেন।তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘যখন ঘুম থেকে উঠলাম, দেখলাম বৃষ্টির পানি তার ওপর আর বাতাস বইছে তার ওপর দিয়ে, আর ঠান্ডায় মেয়েটা হঠাৎ করেই মারা গেল।’তিনি কান্নায় বলেন, ‘তার কোনো অসুখ ছিল না। আহ, আমার বুকের আগুন, আমার বুকের আগুন, আহ আমার জীবন।’
পৌরসভা ও সিভিল ডিফেন্স কর্মকর্তারা জানান, জ্বালানির ঘাটতি ও সরঞ্জামের ক্ষতির কারণে তারা এই ঝড় সামাল দিতে পারছেন না। যুদ্ধ চলাকালে ইসরায়েল শত শত যান—বুলডোজারসহ পানি নিষ্কাশনের যন্ত্রপাতি—ধ্বংস করেছে বলে তারা জানান। দুই বছরের যুদ্ধ গাজার দুই মিলিয়নেরও বেশি মানুষের অধিকাংশকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং গাজার বড় অংশই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
সিভিল ডিফেন্স সার্ভিস জানায়, উপত্যকার বেশিরভাগ তাঁবু শিবিরই পানিতে ডুবে গেছে এবং তারা আড়াই হাজারের বেশি উদ্ধার কল পেয়েছে।ভেসে যাওয়া পানিতে বাস্তুচ্যুত মানুষের কিছু জিনিসপত্রকে তাঁবু শিবিরের সরু পথগুলোতে ভাসতে দেখা গেছে।
একটি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সাড়ে আট লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া ৭৬১টি বাস্তুচ্যুতি কেন্দ্র প্লাবনের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে এবং ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনায় হাজারো মানুষ এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে গেছে।
জাতিসংঘ ও ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলেন, এখনো বাস্তুচ্যুত প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে কমপক্ষে তিন লাখ নতুন তাঁবু প্রয়োজন। বিদ্যমান অধিকাংশ আশ্রয়ই জীর্ণ এবং পাতলা প্লাস্টিক কিংবা কাপড় দিয়ে তৈরি।গাজার বাসিন্দারা বোমায় বিধ্বস্ত বাড়িগুলোর ধ্বংসস্তূপ থেকে লোহার রড সংগ্রহ করে তাঁবু টিকিয়ে রাখতে বা কয়েক ডলারে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
অক্টোবর থেকে যুদ্ধবিরতি সাধারণভাবে টিকে আছে, কিন্তু যুদ্ধ গাজার অবকাঠামোর বড় অংশ ধ্বংস করে দিয়েছে, ফলে জীবনযাত্রা হয়ে উঠেছে অত্যন্ত করুণ।
হামাস–নেতৃত্বাধীন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী ইসরায়েল প্রতিশ্রুত মতো সাহায্য প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল প্রয়োজনীয় সামগ্রী আটকে দিচ্ছে। ইসরায়েল বলছে, তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে এবং সাহায্য সংস্থাগুলো অদক্ষ এবং হামাসের চুরি ঠেকাতে ব্যর্থ—যা হামাস অস্বীকার করে।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু বিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) জানায়, প্লাবিত রাস্তা ও ভেজা তাঁবু ইতোমধ্যে ভয়াবহ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে। এক্সে দেয়া এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘ঠান্ডা, অতিরিক্ত ভিড় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ রোগ ও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।’
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘বাধাহীন মানবিক সহায়তা—এর মধ্যে চিকিৎসা সহায়তা ও যথাযথ আশ্রয় অন্তর্ভুক্ত—পেলে এই দুর্ভোগ প্রতিরোধ করা যেত।’গাজা সিটির সিভিল ইমার্জেন্সি সার্ভিস জানায়, ইসরায়েলি হামলায় পূর্বে বিধ্বস্ত হওয়া এলাকায় বৃষ্টি ঝড়ের কারণে তিনটি বাড়ি ধসে পড়ে।

আরও পড়ুন