অনলাইন ডেস্ক: নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন (বিএসসি)। ৫৫ থেকে ৬৬ হাজার ডিডব্লিউটি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ সংগ্রহে দরপত্র উন্মুক্তকরণ, মূল্যায়ন, কারিগরি ও আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতে দরপত্র প্রক্রিয়াকরণের লক্ষ্যে তিনটি উপ কমিটি গঠন করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।বিএসসির নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন “দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার (৫৫,০০০–৬৬,০০০ ডিডব্লিউটি) সংগ্রহ” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় (প্যাকেজ জিডি–০১) এই কমিটিগুলো গঠন করা হয়েছে।
এর আগে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পেয়ে গত ৩ জুন দরপত্র আহ্বান করে নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছে বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন। ৪ জুন থেকে চলছে দরপত্র বিক্রি। ১৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে দরপত্র বিক্রি। ১৬ জুলাই দুপুর ১২টায় দরপত্র জমা দেয়ার শেষ সময় খোলা হবে একই দিন দুপুর দুইটায়। এরপর ১৭ জুলাই থেকে দরপত্র যাচাই-বাছাই ও সরেজমিন পরিদর্শন শেষে মনোনীত দরদাতার সাথে কন্ট্রাক্ট সাইনিং করবে বিএসসি।দরপত্র প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় তিনটি উপ-কমিটি গঠন করেছে। এগুলো হলো দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি এবং কারিগরি সাব-কমিটি।
দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি: এই কমিটির সভাপতি হবেন বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (দূরপ্রাচ্য ও পিএইউ)। সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা), আর সদস্য হিসেবে থাকবেন মহাব্যবস্থাপক (চার্টারিং ও ট্রাম্পিং)। এই কমিটি পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ মোতাবেক স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা বজায় রেখে নির্ধারিত সময়ে দরপত্র উন্মুক্তকরণপূর্বক মূল তথ্য রেকর্ড করে সংশ্লিষ্ট তথ্যাদিসহ প্রতিবেদন প্রস্তুতপূর্বক মূল্যায়ন কমিটির নিকট প্রেরণ করবেন।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি: সাত সদস্যের এই কমিটির সভাপতি বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সদস্যরা হলেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি), নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব ছন্দা পাল, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি)-এর একজন প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেড (সিডিডিএল)-এর একজন প্রতিনিধি, বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (অর্থ)। এই কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিএসসির মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা)।
কমিটি পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ অনুসারে দরপত্র যাচাই-বাছাই ও মূল্যায়ন শেষে সুপারিশসহ একটি প্রাথমিক মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাবে। পরবর্তীতে দরপত্র বিশ্লেষণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদনও প্রণয়ন করে অনুমোদনের জন্য জমা দেবে।
কারিগরি সাব– কমিটি: কারিগরি সহায়তার উদ্দেশ্যে গঠিত এই কমিটির সভাপতি হবেন বিএসসির নির্বাহী পরিচালক (প্রযুক্তি)। সদস্যরা হলেন— মহাব্যবস্থাপক (শিপ পার্সোনেল), মহাব্যবস্থাপক (জাহাজ মেরামত) – যিনি এই কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্বে থাকবেন। এই কমিটি পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ অনুসারে দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটিকে প্রয়োজন অনুযায়ী কারিগরি সহায়তা প্রদান করবে।
বিএসসি সূত্রে জানা যায়, ১৬ জুলাই দরপত্র উন্মুক্ত করার পর মূল তথ্য রেকর্ড করে সংশ্লিষ্ট তথ্যসহ প্রতিবেদন প্রস্তুত করে মূল্যায়ন কমিটির কাছে পাঠাবে।
মূল্যায়ন কমিটি ১৭ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত সরবরাহকৃত ডকুমেন্টেশন যাচাই বাছাই করবে (টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন বেজড অন ডকুমেন্টেশন)। টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশনের আউটপুট নিয়ে এই ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল ‘অনসাইট ইন্সপেকশন’-এ চলে যাবেন অর্থাৎ ডকুমেন্টেশনভিত্তিক টেকনিক্যাল ইভ্যালুয়েশন শেষ হওয়ার পর, সরেজমিনে পরিদর্শনে যাবেন।এরপর দরপত্র/প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটিকে কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে কারিগরি সাব-কমিটিও সরেজমিনে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রয়েছে।
পরিদর্শন শেষে কমিটি পিপিএ-২০০৬ এবং পিপিআর-২০০৮ অনুসারে দরপত্র/প্রস্তাব পরীক্ষণ ও মূল্যায়নপূর্বক সুপারিশসহ একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবে। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলে কন্ট্রাক্ট এগ্রিমেন্ট সাইনিং এর প্রসেস শুরু হবে।
এ বিষয়ে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর মাহমুদুল মালেক বলেন, ‘বিএসসির ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে দুটি বাল্ক ক্যারিয়ার জাহাজ কেনা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। জাহাজ ক্রয়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে তিনটি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘দরপত্র মূল্যায়ন এবং অনসাইট ইন্সপেকশন সম্পন্ন করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করে তা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। এর পর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির (ক্যাবিনেট কমিটি অন গভর্নমেন্ট পারচেজ – সিসিজিপি) অনুমোদন পাওয়ার পর চূড়ান্ত ক্রয় কার্যক্রম শুরু হবে।’ ‘সব কিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চললে আগস্টের শেষ সপ্তাহে বা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কন্ট্রাক্ট সাইন করা সম্ভব হবে’— যোগ করেন তিনি।
