বিনোদন ডেস্ক : ঢাকা থেকে তেলুগু ও তামিল সিনেমার পর্দায়, সেখান থেকে হঠাৎ কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের রিমান্ডে—এ যেন সিনেমার কাহিনিও হার মানায়। বাংলাদেশি মডেল ও অভিনেত্রী শান্তা পাল এখন দুই বাংলার বিনোদন পাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রে।
কলকাতার লালবাজার গোয়েন্দা বিভাগ তাকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতির অভিযোগে। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে দুটি আধার কার্ড, একটি ভোটার আইডি, বাংলাদেশি পাসপোর্ট, একটি বিমান সংস্থার আইডি কার্ড এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রবেশপত্র উদ্ধার করা হয়—যা তদন্তকারীদের সন্দেহের কেন্দ্রে নিয়ে আসে এই উঠতি তারকাকে।
বরিশালের মেয়ে শান্তা পাল ২০১৯ সালে ‘মিস এশিয়া গ্লোবাল’ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে আলোচনায় আসেন। এরপর বাংলাদেশে একাধিক মডেলিং প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হন। সিনেমায় তার অভিষেক ঘটে ‘ব্যাচেলর ইন ট্রিপ’ নামক একটি বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে।তিনি দাবি করেছেন, দক্ষিণ ভারতের তামিল ভাষার সিনেমা ‘ইয়েরালাভা’-তেও তিনি প্রধান নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন, যেটির পরিচালনায় ছিলেন বিশ্বনাথ রাও। এছাড়াও তিনি টালিউডের এক অভিনেতার সঙ্গে কাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বলে জানান।
২০২৩ সাল থেকে শান্তা কলকাতার যাদবপুর এলাকার বিজয়গড়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। কখনও ব্যবসায়ী, কখনও অভিনেত্রী, আবার কখনও সমাজসেবীর ছদ্মবেশে বিভিন্ন পরিচয়ে ঘুরে বেড়াতেন তিনি। তিনি কলকাতায় একটি হোটেল খোলার পরিকল্পনাও করেছিলেন বলে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান। ব্যাংক ঋণ ও অর্থায়নের নথিও মিলেছে তার বাসা থেকে।তবে প্রশ্ন উঠেছে—ভারতের ভোটার কার্ড ও আধার কার্ড তার হাতে কীভাবে এলো?
২০২০ সালে বর্ধমানের এক ঠিকানায় তার নামে একটি আধার কার্ড ইস্যু হয়। পরে আরেকটি কার্ড কলকাতার ঠিকানায় তৈরি করেন। পুলিশের কাছে তিনি এ নিয়ে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেননি।
পুলিশ জানিয়েছে, শান্তা একাধিক নথিপত্র ব্যবহার করে ভারতে অবস্থান করছিলেন, যা ভারতীয় আইন অনুযায়ী গুরুতর অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা হয়েছে এবং তাকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন, এটি একটি বৃহৎ চক্রের অংশ। শান্তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তদন্ত চলছে তার বন্ধু সুমন চন্দ্র শীলকে ঘিরেও, যিনি দক্ষিণ কলকাতার বেহালায় এক নারীকে বিয়ে করে ভারতীয় ঠিকানা ব্যবহার করে আধার কার্ড সংগ্রহ করেছেন বলে জানা গেছে।
শান্তার বিলাসবহুল জীবন, বারবার ঠিকানা পরিবর্তন, ভারত-চীন সীমান্ত ঘুরে বেড়ানো এবং ভিডিও ধারণের মতো বিষয়গুলোও তদন্তের আওতায় এসেছে। এর পেছনে কোনও সংবেদনশীল তথ্য পাচারের সম্ভাবনা আছে কিনা, তা নিয়েও গোয়েন্দারা তৎপর।
এক সময় ক্যামেরার সামনে হাসি ছড়ানো মডেল এখন তদন্ত কক্ষে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি। তার অভিনয় জীবনের উত্থান যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি তার ব্যক্তিজীবনের এই অধ্যায় আজ রহস্যে মোড়া।
