২৯শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন বলে জানিয়েছেন চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান সাহেব সম্মত হয়েছেন যে উনারা বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন ইনশাআল্লাহ। বৈঠকে উনারা ঠিক করবেন কোনটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ। সেটিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা সফল হয়েছি। বুধবার দুপুরে আগ্রাবাদ এক্সেস রোডের সিটি হল কনভেনশন হলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম চট্টগ্রামের বাণিজ্যিক প্রসারে প্রতিবন্ধক ওজন স্কেল, বন্দর ট্রাফিক ও চিটাগাং চেম্বারকে জবাবদিহিমূলক ও ব্যবসায়ীবান্ধব করার প্রত্যয়ে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের প্রথম সভায় আলটিমেটাম দেওয়ার পরে বন্দরের চেয়ারম্যান স্বপ্রণোদিত হয়ে মন্ত্রণালয়ে লিখে চারটি খাতে ট্রাক, প্রাইমমুভার, ট্রেইলার, গেইট ফি খাতে বর্ধিত ট্যারিফ স্থগিতের ব্যবস্থা করেছিলেন। সিঅ্যান্ডএফ চার ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেছিল, সে কারণে উইথড্র করে নিয়েছি। আমরা চাইনি চট্টগ্রাম বন্দরের কোনো ক্ষতি হোক। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টার কাছে আমরা চিঠি দিয়েছি। উনি একটি পক্ষকে আমাদের সঙ্গে আলাপ করার জন্য নিযুক্ত করেছেন। গতকাল বন্দর চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলাপ করেছি। আমি অত্যন্ত খুশি হয়ে বলতে পারি আপনাদের, বন্দরের চেয়ারম্যান সাহেব সম্মত হয়েছেন যে উনারা বন্দর ব্যবহারকারী, ক্ষতিগ্রস্ত, স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে ১০-১৫ দিনের মধ্যে বৈঠকে বসবেন ইনশাআল্লাহ। বৈঠকে উনারা ঠিক করবেন কোনটা যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ। সেটিই গ্রহণযোগ্য হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা সফল হয়েছি। দ্বিতীয় পর্যায়ে অনুরোধ করবো সব অ্যাসোসিয়েশনকে বন্দরের ট্যারিফ কোন কোন খাতে বেশি হয়েছে তা আমাদের জানাবেন। আমরা চেষ্টা করবো সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত ট্যারিফ যাতে নির্ধারণ করতে পারি। আমরা আশা করব সরকার ব্যবসায়ীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে।
বিশেষ অতিথি বিজিএমইএর পরিচালক এমএ সালাম বলেন, আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন চিটাগাং চেম্বারে গতিশীল নেতৃত্ব দরকার। বিভিন্ন সেক্টর থেকে প্রতিনিধি নিয়ে ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের প্যানেল দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ নিয়ে এ ফোরাম সোচ্চার ছিল। ২৪ জনের প্যানেল চিটাগাং চেম্বারকে মেরামত করবে। এ নির্বাচনে ৭ হাজার ৭০০ ভোটার। আগামী দুুই বছরের মধ্যে ২০-৩০ হাজার ভোটার করতে হবে। মেম্বার ফি ৫ হাজার থেকে কমিয়ে ২-১ হাজারে নামাতে হবে। এ সরকারের আমলে বিজিএমইএতে সুন্দর নির্বাচন হয়েছে। আশাকরি চট্টগ্রাম চেম্বারের নির্বাচনও সুন্দর হবে।
চিটাগাং চেম্বারের সাবেক সভাপতি সরওয়ার জামাল নিজাম বলেন, চট্টগ্রাম চেম্বার দেশের প্রিমিয়ার চেম্বার। দেশের অর্থনীতিরতে চট্টগ্রামের অবদান ৪৭ শতাংশ। ১৯৯৫ সালে চেম্বার সভাপতি থাকাকালে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করি। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার হলে চট্টগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী হবে। ১৫ দিনে জায়গা ঠিক করি। তখন নেত্রী দক্ষিণ কোরিয়া ছিলেন। কবলায় আমার সই আছে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বেগম খালেদা জিয়া করেছেন। চট্টগ্রাম চেম্বারে যোগ্য সভাপতি নির্বাচিত হলে দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রধান বক্তা ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামের টিম লিডার মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, আপনারা শুনে লজ্জিত হবেন খুবই দুঃখজনক মহাসড়কে একটা স্কেলের জন্য চট্টগ্রাম থেকে মীরসরাই পাথর, কয়লা যায় না। মোংলা বন্দর থেকে ট্রাকে মীরসরাইর ইকোনমিক জোনে কয়লা পাথর আসে। তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ দুর্ভোগ আমাদের দিয়ে গেছে।
চট্টগ্রাম নগরীকে সুন্দর, পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য ফুটপাত থেকে হকারদের অন্য জায়গায় নিতে হবে। আর কোনো অপশন নেই। আমি জানি না এরা কোন দল করে। সবসময় তারা সরকারি দল করে। এখন তো অন্তর্র্বতী সরকার। এ সরকারের আমলেও তারা ফুটপাত দখল করে আছে। এর জন্য ব্যবসায়ীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। মার্কেটের সামনে, দোকানের সামনে ফুটপাতে কাউকে বসতে দেবেন না। নারী, শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন। ব্যবসায়ীদের যেকোনো আন্দোলনে দরকার হলে রাস্তায় বসে যাব আমি। আপনারা যদি সাথে থাকেন চট্টগ্রামকে হকারমুক্ত করা সম্ভব। প্যাকেজ ভ্যাট সবাই মিলে কথা বললে করা যাবে। ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের জায়গাটি সরওয়ার জামাল নিজাম সাহেব যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন বেগম খালেদা জিয়া দিয়েছিলেন। বাকি জায়গাটুকু আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী যখন চেম্বার সভাপতি ছিলেন তখন ব্যবস্থা করেছিলেন। দুইজনকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাই। চিটাগাং চেম্বারের সদস্য ফি ৫ হাজার থেকে নামিয়ে আমি ২ হাজার টাকার নিচে আনার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।
শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন পরিচালক শাহেদ সরওয়ার বলেন, আলোচিত বিষয় বন্দর ট্যারিফ। এ টাকা কে পরিশোধ করবে। ফেরত কীভাবে আসবে। বন্দর ট্যারিফ ৪১ শতাংশ বেড়েছে প্রচার করলেও কোনো ক্ষেত্রে ৩০০ শতাংশও বেড়েছে। আগে ৩৭১ ডলার দিতাম, এখন ১৫০০ ডলার দিতে হচ্ছে। ব্যাপারটা অ্যালার্মিং।
বারভিডার সাবেক সভাপতি হাবিবুল্লাহ ডন বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি রপ্তানির লাইফলাইন। সম্প্রতি বন্দরের সেবার ওপর যেভাবে ট্যারিফ বাড়ানো হয়েছে তাতে ব্যবসায়ীরা উদ্বিগ্ন। চট্টগ্রাম চেম্বারে এক বছর ধরে প্রশাসক। সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য শক্তিশালী চেম্বার দরকার। আমার সংগঠনের ভোটারদের বলেছি ইউনাইটেড বিজনেস ফোরামকে ভোট দেবেন।
সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম বলেন, বন্দরের গলা কাটা ট্যারিফ বন্ধে কাজ করছেন আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী। সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন চার ঘণ্টার কর্মবিরতি করেছিল, যানবাহন ও প্রবেশ ফি বন্ধের দাবি মেনে নিয়েছে। বন্দরের নতুন ট্যারিফ শিডিউল নিয়ে আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা হবে। চিটাগাং চেম্বারে সদস্য চাঁদা নিয়ে বৈষম্য নিরসনের দাবি জানান তিনি।
নাসিরুদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী চৌধুরী, বিজিএপিএমইএর প্রথম সহ সভাপতি শহীদুল্লাহ্ চৌধুরী, বিজিএপিএমইএর উপদেষ্টা লতিফুর রহমান আজিম, টেরিবাজার ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বেলায়েত হোসেন ও সভাপতি আবদুল মান্নান, টায়ার টিউব ডিলার গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক শাহজাহান, চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম বন্দর মেরিন কনট্রাকটর অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি দোস্ত মোহাম্মদ, সেন্ট্রাল প্লাজা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলম টিটু, ফিনলে স্কয়ার ব্যবসায়ী সমিতির মিয়া মো. খালেদ, ব্যবসায়ী নেতা এরফান উদ্দিন খোকন প্রমুখ।উপস্থিত ছিলেন সিঅ্যান্ডএফ সাবেক সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু।

আরও পড়ুন