২৯শে জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

প্রশাসনে রদবদল আসবে ভোটের আগে, প্রশিক্ষণ পাবে পুলিশ: প্রেস সচিব

অনলাইন ডেস্ক: ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদল করা হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া দায়িত্ব পালনের জন্য দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাস প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হবে।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং জাতীয় নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর প্রস্তুতি নিয়ে দুই ঘণ্টাব্যাপী চলা বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এই তথ্য জানিয়েছেন।
আলোচনার বিষয়ে শফিকুল আলম বলেছেন, অনেক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে প্রথমে সমন্বয় বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হয়।তিনি বলেন, “আর্মি, পুলিশ এবং রাষ্ট্রের অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের মধ্যে কো অর্ডিনেশন বাড়ানোর কথা বারবার জোর দিয়ে বলা হচ্ছে। এই কো অর্ডিনেশন প্রান্তিক এবং জাতীয় পর্যায়ে বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।”
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র) খোদা বখস চৌধুরী, মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ, পুলিশের মহপরিদর্শক বাহারুল আলম, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের পিএসও লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসানসগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভোটের মাঠে পুলিশের প্রস্তুতি
নির্বাচনি দায়িত্ব পালনে পুলিশের মহাপরিদর্শক বাহারুল আলম তার বাহিনীর প্রস্তুতি প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেছেন বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম।তিনি বলেন, “পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেছেন সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেড় লাখ পুলিশের ট্রেনিং হবে ইলেকশনের বিষয়ে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর-নভেম্বর মাসে দেড় লাখ পুলিশকে নির্বাচনের বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া হবে।”শফিকুল আলমের ভাষ্য, নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে ‘ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে’।অপতথ্য রোধ নিয়ে তিনি বলেন, “এটাকে সামনে রেখে ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার যেখানে খুব দ্রুততার সাথে মিস ইনফরমেশনকে আমরা প্রতিহত করতে পারবো। এটা নিয়ে বিষদ আলোচনা হয়েছে।”শৃঙ্খলাসংক্রান্ত যে কোনো তথ্য দ্রুত সংবাদকর্মীদের সামনে তুলে ধরার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ বাহিনী।
এ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেন, “পুলিশের একটি সেন্ট্রাল কমান্ড স্ট্রাকচার কিছুদিন আগে করা হয়েছে। সেখানে একটা মিডিয়া সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন তারা। যাতে করে দ্রুত আইন শৃঙ্খলাসংক্রান্ত যে কোন ইনফরমেশন কালেক্ট করা যায়৷ সেখানে প্রতিদিন যাতে প্রেস কনফারেন্স করে আপনাদের (সাংবাদিক) জানানো যায় যে, কোথায়, কি, কিভাবে হচ্ছে। সিচুয়েশনটা কি৷ এবং প্রত্যেকটা খুব দ্রুততার সাথে।
“আপনারা যাতে প্রতিনিয়ত ইনফরমেশন পান সে বিষয়ে জোরদার করতে বলা হয়েছে৷ এ বিষয়ে প্রফেসর ইউনূস বারবার বলেছেন, পুলিশের কাজগুলো অনেক ক্ষেত্রেই মানুষের কাছে আসছে না একটা ইনফরমেশন সেন্টার বা মিডিয়া সেন্টার না থাকার কারনে। পুলিশ অনেক জায়গায় অনেক ভালো ভালো কাজ করছেন। খুব দ্রুত সাড়া দিচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে অনেকের কাছে বিষয়গুলো জানা থাকছে না। সেজন্য মিডিয়া সেন্টারটা কাজ করবে৷”
প্রশাসনে হবে রদবদল, থাকবে সেনাবাহিনী
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে ৬০ হাজার সেনা সদস্য নির্বাচনি দয়িত্বে থাকবে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সভায় জানানো হয়েছে।”
প্রশাসনের রদবদল নিয়ে সভায় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের আগে প্রশাসনের রদবদল হবে। সব জায়গায় রদবদল হবে এমন সিদ্ধান্ত হয়নি। যেখানে যেখানে প্রয়োজন সেখানে রদবদল করা হবে।”এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আজাদ মজুমদার।
সন্ত্রাস দমনে জিরো টলারেন্স
ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে এদিন যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন সাক্ষাৎ করেছেন।“এসময় প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, টেরোরিস্টদের ব্যাপারে এই সরকারের জিরো টলারেন্স।”
সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের বৈঠক হয়েছে জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, “ যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ, কাউন্টার টেরোরিজম, ইলেকশনের প্রস্তুতি, ঐকমত্য কমিশনের যে সংলাপগুলো হচ্ছে সেগুলো নিয়ে আলাপ হয়েছে।
“এসময় প্রফেসর ইউনূস চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে জানিয়েছেন যে অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হচ্ছে কাউন্টার টেরোরিজম এবং তিনি আরও বলেছেন, টেরোরিস্টদের ব্যাপারে এই সরকারের জিরো টলারেন্স।”প্রেস সচিব বলেন, রাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত সম্পূরক শুল্কের বিষয়ে দেশেরপ্রতিনিধি দলের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টদের আলোচনা হতে পারে।“আমরা আশা করছি, এই আলোচনা ভালোভাবে সমাপ্তি হবে। প্রতিনিধিদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের একটি দলও যাচ্ছেন, তবে তারা আলোচনায় থাকবেন না।”

আরও পড়ুন