রাঙামাটি প্রতিনিধি : কাঁচা দেখতে অনেকটা আঙুরের মতন হলেও পাকা অবস্থায় একেবারে লাল টকটকে। কাঁচা খাওয়া না গেলেও ফলটি পাকলে খোসা ছড়ানোর পর ভেতরের বীজসহ অংশটি জমাট বাধা রক্তের মতো দেখায়। খাওয়ার সময় এর রস শরীরের যেখানেই লাগবে সেখানেই লাল হয়ে যায়। মনে হবে শরীরের কোনো অংশ কেটে গেছে। তাই এ ফলটিকে ‘রক্ত ফল’ বলেন অনেকেই। বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের খুব প্রিয় এই ফলটি।
বুনো এই ফলটিকে ইংরেজিতে ‘ব্লাড ফ্রুট’ বা রক্ত ফল বলে। তবে পাহাড়িদের কাছে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। চাকমা ভাষায় রসকো, ত্রিপুরা ভাষায় থাইটাক নামেই পরিচিত। খেতে সাধারণত টক এবং মিষ্টি হওয়ায় বেশ জনপ্রিয় এই ফলটি। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় এই ফল ভালো জন্মে। পাহাড়িদের কাছে ফলটির ব্যাপক চাহিদা থাকায় অনেকে বাণিজ্যিকভাবে এ ফলের চাষাবাদের উদ্যোগ নিয়েছেন।
জানা গেছে, এই ফলের গাছ বিরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। কাণ্ড একেবারে নরম। অন্য গাছের ওপর ভর করে উপরে উঠে। একটি কাষ্টযুক্ত গাছের চারপাশ দখল করে শাখাপ্রশাখা বিস্তৃত হয় রক্ত ফলের লতার। ফ্রেব্রুয়ারি মাস থেকে থোকায় থোকায় ফুল দেয়া শুরু হয় এবং এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। পেকে লাল হওয়ার পরই খাওয়ার উপযোগী হয়। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গাছে কমপক্ষে ২০–২৫ হাজার ফল ধরে। বীজ এবং কলম উভয় পদ্ধতিতে এ গাছের বংশবিস্তার করা যায়।
সমপ্রতি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের কৃষ্ণমাছড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় সুব্রত বিকাশ চাকমা তার বাড়ির পাশে এ ফলের আবাদ করেছে। তিনি বলেন, এই ফলের লতাটির বয়স প্রায় ১৮ বছরের উপরে হবে। বীজ থেকে লতাটি লাগানোর ৬–৭ বছরের মধ্যে ফল এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার টাকার বেশি ফল বিক্রি হয়েছে। এ বছর আনুমানিক ২০–২৫ হাজার টাকার মতো ফল বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০–৪০০ টাকা দরে।
ভরত ধন চাকমা নামে স্থানীয় একজন বলেন, আমি কয়েকটি রসকো ফল খেয়ে বীজগুলো একটা গর্তে রোপণ করেছি। এরপরে বীজ থেকে লতা বের হয়ে বড় হতে হতে প্রায় ৮ বছর পরে ফল ধরেছে। এতে কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। তবে পানি দিলে ফলগুলো বড় হয়, আবার পানি না দিলেও চলে। আমার এ বছর মণ খানেক মতো ফল এসেছে। এখনো পুরোপুরি পাকেনি, পাকলে বেচা–বিক্রি শুরু করব।
জানতে চাইলে কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) রাঙামাটি জেলা কার্যালয়ের উপ–পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ফলটি নিয়ে এখনো কোনো গবেষণা করা হয়নি। বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ফলটি দেখা যায়। বাজারেও ভালো চাহিদা রয়েছে। পুষ্টিগুণ হিসেবে এই ফলে ফাইবার ছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি–৬ রয়েছে। এছাড়া ফলের লতাটি জন্ডিস ও চুলকানিতে ওষুধের কাজে ব্যবহার করেন পাহাড়িরা আর কারো রক্তস্বল্পতা দেখা দিলেও তারা এই ফলটি খেয়ে থাকেন।
