২৩শে অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

ধীরগতি চট্টগ্রাম ওয়াসার ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকার প্রকল্পে

মোহাম্মদ জাহেদ উল্ল্যাহ চৌধুরী: চট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রকল্পের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সড়ক কেটে প্রকল্পের পাইপলাইন বসাতে হয়। তাই সড়ক কাটার আগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) থেকে অনুমতি নিতে হয় ওয়াসাকে। বর্ষার কারণে ৪ মাস রাস্তা কর্তনের অনুমতি সীমিত করে চসিক। এ কারণে পয়োপাইপলাইন বসানো কাজের গতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যাচ্ছে না। সড়ক কাটার অনুমতি বিলম্ব ও সীমিত করার কারণে বর্তমানে পাইপলাইন বসানোর কাজ চলছে সক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ।এছাড়া আরো কয়েকটি কারণে প্রকল্পের কাজ একেবারে ঢিমেতালে চলছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম ওয়াসার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ‘স্যুয়ারেজ’। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ওয়াসার স্যুয়ারেজের প্রথম প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকারের সম্পূর্ণ অর্থায়নে প্রকল্পের জন্য প্রথমবার ব্যয় ধরা হয়েছিল তিন হাজার ৮০৮ কোটি ৫৮ লাখ ৭৭ হাজার টাকা। কিন্তু পরে প্রকল্পটি সংশোধিত প্রস্তাব চলতি বছরের ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন হলে ব্যয় বাড়ে আরো এক হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তাতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।
ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, চ্যালেঞ্জের কারণে স্যুয়ারেজ প্রকল্পের গতি বাড়ানো যাচ্ছে না। তারপরও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সাথে সমন্বয় করে গতি বাড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে প্রকল্পের ৬৯ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রকল্পের সংশোধিত প্রস্তাব চলতি বছরের ২০ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদন হলে ব্যয় বাড়ে আরো এক হাজার ৪১০ কোটি টাকা। তাতে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ২১৯ কোটি টাকা।
ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, স্যুয়ারেজ প্রকল্পের অন্যতম কাজ হচ্ছে পয়োপাইপলাইন বসানো। নগরীর সড়কগুলোতে বসানো হয় পাইপলাইন। এজন্য চসিক থেকে অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু যথাসময়ে অনুমতি না পেলে কাজের গতি বাড়ানো যায় না। তাই কাজের গতি বাড়াতে ওয়াসা ও চসিক মিলে একটি যৌথ কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করি এ কমিটির মাধ্যমে কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব হবে।
সড়ক কর্তন নিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্ষা মওসুমশেষে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ প্রায় ৭০টি সড়কে উন্নয়ন ও সংস্কারের কাজ করবে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। তাই রাস্তা কাটার ব্যাপারে সমন্বয় করতে চসিক ও ওয়াসা একটি যৌথ কো-অর্ডিনেশন কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে রাস্তা কর্তনের অনুমতি দিবে চসিক।
জানা গেছে, বর্তমানে দুইভাগে চলছে প্রকল্পের কাজ। একটি হচ্ছে- পাইপলাইন বসানো এবং অপরটি হালিশহরে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণ। প্রকল্পের অধীনে সবমিলে পয়োপাইপলাইন বসানো হবে ২০০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৮১ কিলোমিটার অগভীর পাইপলাইন। বর্তমানে অগভীর পাইপলাইন বসানো হয়েছে ৯৭ কিলোমিটার। এসব পাইপলাইন সর্বোচ্চ ৪ মিটার মাটির গভীরে বসানো হচ্ছে। অপর ১৯ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে সর্বনিম্ন ৬ মিটার থেকে সর্বোচ্চ ১৪ মিটার মাটির গভীরে। প্রকল্পের অধীনে বর্তমানে গভীর পাইপলাইন বসানো হয়েছে ৯ কিলোমিটার। সবমিলে বিভিন্ন সাইজের পাইপলাইন বসানো হয়েছে ১০৬ কিলোমিটার। এতে পাইপলাইনের কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫০ শতাংশ।
অপরদিকে হালিশহরে প্রকল্প এলাকায় পয়োশোধনাগার, ফিক্যাল স্লাজ ট্রিটমেন্ট (মানুষের মল পরিশোধনাগার) প্ল্যান্ট নির্মাণে সিভিলের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ এবং ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল কাজ হয়েছে ৪০ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পের অধীনে গৃহ পয়োসংযোগ হবে ২৮ হাজার। বর্তমানে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে ১২ হাজার গৃহে। সবমিলে স্যুয়ারেজের প্রথম প্রকল্পের এ পর্যন্ত ৬৯ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আগামী ২০২৬ সালে প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার।
জানা গেছে, কয়েকটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ওয়াসার স্যুয়ারেজ (পয়োনিষ্কাশন) প্রকল্পটি। রাস্তা কর্তনে চসিকের সীমিত আকারে অনুমতি প্রদান, চাহিদার তুলনায় মন্ত্রণালয়ের কম অর্থ ছাড়, নগরীর কিছু ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় সরু রাস্তার কারণে পাইপলাইন স্থাপনে ধীরগতি, বে-টার্মিনালে পাশে চ্যানেল নির্মাণে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিলম্ব ও হালিশহর বড়পুল চৌ-চালা সড়কের পাশে প্রকল্পের প্রধান ট্রাঙ্কলাইন স্থাপনের জন্য অস্থায়ীভাবে ভূমি ব্যবহারে রেলের সিদ্ধান্ত জানাতে বিলম্বের কারণে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এতে কাজের গতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ওয়াসা সূত্র জানায়, দক্ষিণ কোরিয়ার ঠিকাদার সংস্থা তায়ং ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড এ প্রকল্পের কাজ করছে। একইসাথে চলছে গ্রাহক পর্যায়ে পয়োসংযোগ লাইন প্রদানের কাজও। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর নগরীর ২০ লাখ মানুষ স্যুয়ারেজের আওতায় আসবে। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত চট্টগ্রাম ওয়াসার এটিই হচ্ছে প্রথম স্যুয়ারেজ প্রকল্প।

আরও পড়ুন