অনলাইন ডেস্ক: ছোট্ট একটি চায়ের দোকান, কেতলি থেকে ভেসে আসা ধোঁয়ার সঙ্গে মিশে আছে এক তরুণের সংগ্রামী জীবনের গল্প। দুই হাত নেই, তবু জীবনের কাছে হার মানেননি জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলার মোসলেমাবাদ গ্রামের নিহাল। অদম্য মনোবল নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন একটি চায়ের দোকান, যা এখন তার জীবন সংগ্রামের প্রতীক।২০২২ সালে এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় বিদ্যুতের কাজ করতে গিয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হন নিহাল।বিদ্যুৎ লাইনে কাজ করার সময় মারাত্মক দগ্ধ হন তিনি। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তার দুই হাতের কব্জির নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয়। সেই দুর্ঘটনায় একদিকে বন্ধ হয়ে যায় পড়াশোনা, অন্যদিকে থেমে যায় জীবিকার পথও।তবে হতাশায় ডুবে না গিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন নিহাল।এক বছর পর নিজের উদ্যোগে মোসলেমাবাদ বাজারে ছোট্ট একটি চায়ের দোকান খুলে শুরু করেন জীবনের নতুন অধ্যায়। নেই দুই হাত, কিন্তু বুকভরা সাহস আর স্বপ্ন নিয়ে নিজেই চা বানান, পরিবেশন করেন।নিহাল বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর অনেকেই ভেবেছিলেন আমি হয়তো ভিক্ষা করব। কিন্তু আমি তা করিনি।মানুষের কাছে না গিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। শুরুতে ব্যবসা ভালোই চলছিল, তবে এক সময় লোকসানে পড়ে দোকান বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার নতুন করে শুরু করি। সরকার যদি সাহায্য করতে চায়, করবে। আমি কারো কাছে কিছু চাই না।আমার চাহিদাও সীমিত।’
নিহালের দোকানে চা খেতে আসা স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তার দুই হাতের অর্ধেক অংশ দিয়েই কাপে চা ঢালেন, চা পরিবেশন করেন। প্রতিদিন অনেকেই আসে তার দোকানে কেউ চা খেতে, কেউ তাকে দেখতে। চায়ের দোকান আর সামান্য প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া তার কোনো আয়ের উৎস নেই।’
নিহালের মা খাদিজাতুন কুবরা জানান, ছেলে ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিল। বৈদ্যুতিক কাজ জানত। এখন দোকানের আয় আর প্রতিবন্ধী ভাতা ছাড়া কোনো রোজগার নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তিনি নিজেও কোনো সরকারি ভাতা পান না।
স্থানীয়রা জানান, কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও নিহাল ও তার মায়ের সংসারে রয়েছে আত্মসম্মান ও শান্তি। তারা কারো কাছে হাত পাতেন না। মাদারগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তৌফিকুল ইসলাম খালেক বলেন, ‘নিহাল প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আছেন। তাকে নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে আরো সহায়তা করার পরিকল্পনা রয়েছে। তার মাকে বিধবা ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে।’
